এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত: দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স

এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত: দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স

এলাহাবাদ: এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগের পর তাঁকে অপসারণের প্রস্তাবের অধীনে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরবিন্দ কুমার, মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি মনিন্দর মোহন এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিবি আচার্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিচার বিভাগের মর্যাদা বজায় রাখা এবং দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করার দিকে এটি একটি পদক্ষেপ।
 

তদন্ত কমিটি গঠন: একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বলেছেন যে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সংবিধানের ১২৪ (৪) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা বিচারকের অসদাচরণ তদন্ত করতে পারবে। এই কমিটি গঠনকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষা করা যেতে পারে এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

ওম বিড়লা বলেছেন, 'আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর এবং সংসদে এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলা উচিত। বিচার বিভাগের পবিত্রতা ও সততা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।' তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যে তদন্তে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের পরিচয়

এই তিন সদস্যের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা বিচারিক ও আইনি ক্ষেত্রের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরবিন্দ কুমারকে তদন্তের সভাপতিত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি তাঁর নিরপেক্ষ রায় এবং বিচারিক অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি মনিন্দর মোহনও এই কমিটির সদস্য, যাঁর বিচারিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও, কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিবি আচার্যকে আইনি বিশেষজ্ঞতা এবং পক্ষপাতমুক্ত তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

বিতর্কের শুরু এবং মামলা

এই বিতর্কের শুরু তখন, যখন মার্চ ২০২৫-এ বিচারপতি ভার্মার দিল্লির বাসভবনের বাইরে পোড়া নোট পাওয়া যায়। এই ঘটনা বিচারিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এটিকে একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর দিল্লি হাইকোর্ট বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে স্থানান্তরিত করে। এছাড়াও, অভিযোগের তদন্তের জন্য দিল্লি হাইকোর্ট একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করে, যা এই মামলাটিকে উচ্চ-পর্যায়ের বলে মনে করে।

৭ই আগস্ট দিল্লি হাইকোর্ট বিচারপতি ভার্মার আবেদন খারিজ করে দেয়, যা তাঁর জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এই রায়ের পর লোকসভায় তাঁর তদন্ত ও অপসারণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা আরও জোরদার হয়।

বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি

এই মামলা ভারতীয় বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আলোচনাকে পুনরায় উস্কে দিয়েছে। বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখা আবশ্যক এবং কোনো স্তরে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিচারিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির ভাবমূর্তির ওপর প্রশ্ন ওঠা বিচার বিভাগের পুরো প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে। তাই এই ক্ষেত্রে লোকসভার স্পিকারের পদক্ষেপ প্রশংসার যোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্সের বার্তা

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন যে সংসদ ও বিচার বিভাগ উভয়কেই একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তিনি বলেন যে এই ধরনের মামলায় কোনো আপস করা হবে না এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এতে শুধু বিচার বিভাগের সম্মানই বাঁচবে না, সাধারণ মানুষের বিশ্বাসও আরও দৃঢ় হবে।

Leave a comment