আমেরিকা ও ইউরোপ রাশিয়াকে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যেসব দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তাদেরও সতর্ক করছে। ভারতও সেই তালিকায় রয়েছে। ভারত শান্তি ও নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকা রাশিয়ার তেল বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
আমেরিকার লক্ষ্য: ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপ রাশিয়াকে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপরও চাপ সৃষ্টি করছে, যার মধ্যে ভারতের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। আমেরিকা চায় বিশ্বজুড়ে দেশগুলি তার মহার্ঘ শক্তি (energy) কিনুক এবং রাশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে যাক। ভারত তার নীতিতে অটল থেকে শান্তি বজায় রাখা এবং দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণের জন্য রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
আমেরিকা ও ইউরোপের কৌশলগত পদক্ষেপ
আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলি রাশিয়ার উপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মতে, এতে রাশিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে এবং তারা ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট স্পষ্ট করেছেন যে, রাশিয়ার তেল ক্রেতাদের উপরও চাপ সৃষ্টি করা হলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে। তিনি বলেন, এর ফলে প্রেসিডেন্ট পুতিন আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হবেন।
জেলেনস্কি ভারত সহ দেশগুলির উপর চাপ সৃষ্টির সমর্থন করেছেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আমেরিকার এই বক্তব্যের পূর্ণ সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, যে দেশগুলি এখনও রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তাদের উপর শুল্ক বা বিশেষ কর বসানো উচিত। তিনি সরাসরি ভারত সহ দেশগুলির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। জেলেনস্কির মতে, রাশিয়াকে দুর্বল করার জন্য শুধু নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়, বরং তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপরও চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট, শান্তি ও আত্মনির্ভরতা
ভারত সবসময় বলেছে যে তারা ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে বিশ্বাস করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহুবার স্পষ্ট করেছেন যে ভারত শান্তি চায় এবং কোনও পক্ষের সমর্থন করছে না। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে যাতে দেশের বিশাল জনসংখ্যার জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা যায়। সরকার মনে করে, এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব চাপের মুখেও ভারতের এই অবস্থান তার নিজস্ব কৌশলের প্রতি অবিচল থাকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমেরিকার চাপ সত্ত্বেও ভারত তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনও আপস করতে রাজি হয়নি।
আমেরিকার আসল উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয় নয়। আসল খেলা হল বিশ্ব তেল ও গ্যাস বাজারের দখল নেওয়া। আমেরিকা চায় বিশ্বজুড়ে দেশগুলি তার মহার্ঘ শক্তি কিনুক এবং রাশিয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাক। এর জন্য এখন তারা ভারত সহ বড় তেল ক্রেতাদেরও নিশানা করছে।
তেল বাজারের এই কৌশলগত লড়াইয়ে আমেরিকার উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহের নিয়ন্ত্রণে তার আধিপত্য বজায় রাখা নিশ্চিত করা। এই অবস্থায় ভারত সহ বড় আমদানিকারক দেশগুলি তাদের জ্বালানি সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানি সহযোগিতা
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বজায় রেখে ভারত তার জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়া ভারতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। আমেরিকা ও ইউরোপের চাপ সত্ত্বেও ভারত তার কেনাকাটায় কোনও হ্রাস করেনি। এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।