লোকসভায় অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার সময় অমিত শাহ কংগ্রেসের ওপর তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি সোনিয়া গান্ধীর বাটলা হাউস এনকাউন্টারে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য কান্নার অভিযোগ তোলেন এবং विपक्षকে ভিডিও দেখানোর চ্যালেঞ্জ জানান।
অমিত শাহ: মঙ্গলবার লোকসভায় অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার সময় ગૃહমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেসের ওপর সরাসরি তীব্র আক্রমণ করলে সংসদের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি ২০০৮ সালের বাটলা হাউস এনকাউন্টারে পুরোনো ঘটনা সংসদে তোলেন। অমিত শাহ এই সময় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ওপর গুরুতর অভিযোগ তোলেন যে তিনি সন্ত্রাসবাদীদের জন্য চোখের জল ফেলেছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভাষণে সালমান খুরশিদের একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দেন এবং বলেন যে তিনি সেই সাক্ষাৎকারটি তার মোবাইলে সংরক্ষণ করে রেখেছেন এবং প্রয়োজন পড়লে দেশের জনগণের সামনে তিনি ভিডিওটি দেখাতে প্রস্তুত। শাহ বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, যদি সাহস থাকে, তবে তারা সময় নির্ধারণ করুক এবং এই সত্য দেশের সামনে তুলে ধরা হবে।
সংসদে গর্জে উঠলেন অমিত শাহ
লোকসভায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেন, 'আমি সালমান খুরশিদজির কথা স্মরণ করতে চাই। একবার আমি নাস্তা করছিলাম, টিভিতে দেখলাম তিনি কাঁদছেন। আমি ভাবলাম হয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে জানতে পারলাম তিনি সোনিয়া গান্ধীর বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন এবং বলছিলেন যে বাটলা হাউসের ঘটনা দেখে সোনিয়া গান্ধী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানেই থামেননি। তিনি আরও বলেন, 'সন্ত্রাসবাদীদের জন্য কাঁদতে হবে? যদি কাঁদতেই হয়, তবে শহীদ ইন্সপেক্টর মোহন চাঁদ শর্মার জন্য কাঁদুন, যিনি এই এনকাউন্টারে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এটি সেই মানসিকতা যা দেশের সুরক্ষাকে সবসময় দুর্বল করে তুলেছে।'
'ভিডিও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে'
অমিত শাহ সালমান খুরশিদের সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে বলেন যে তার কাছে সেই ভিডিও রেকর্ডিং সংরক্ষিত আছে, যেখানে খুরশিদ স্বীকার করেছেন যে সোনিয়া গান্ধী বাটলা হাউস এনকাউন্টার নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। শাহ বলেন, 'আমি সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে এসেছি, সংরক্ষণ করে রেখেছি। যদি তাদের ইচ্ছা হয়, তবে কাল সময় নির্ধারণ করুন। আমি সেটি পুরো দেশকে দেখাতে প্রস্তুত। জনগণের সত্য জানার অধিকার আছে।'
কংগ্রেসের ওপর গুরুতর অভিযোগ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন করেন যে তারা দেশের কাছে প্রশ্ন করার কথা বলছেন, অথচ তাদের নিজেদের অতীত সন্ত্রাসবাদীদের পালাতে সাহায্য করা দিয়ে ভরা। অমিত শাহ বলেন, '১৯৮৬ সালে দাউদ পালিয়ে যায়, রাজীব গান্ধীর সরকার ছিল। ১৯৯৩ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন, টাইগার মেমন, আনিস ইব্রাহিম পালিয়ে যায় — সব কংগ্রেসের সরকারে। রিয়াজ ভাটকাল এবং ইকবাল ভাটকাল ২০০৭ সালে পালায়, মির্জা সাদাব বেগ ২০০৯ সালে — তখনও কংগ্রেসের সরকার ছিল।' তিনি প্রশ্ন করেন, সেই সময় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল? কোনো সন্ত্রাসবাদীকে ধরার জন্য বা তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য কি কোনো অপারেশন চালানো হয়েছিল? না!'
মোদী সরকারের কঠোরতার উল্লেখ
অমিত শাহ মোদী সরকারের নিরাপত্তা নীতিকে কঠোর বলে উল্লেখ করে বলেন যে এখন দেশ চুপ করে বসে থাকে না। তিনি বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে গিয়ে হামলা করেছি। আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছি, এয়ার স্ট্রাইক করেছি। পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে যে হামলা করা হয়েছে। এখন সেই সময় নেই যে তারা হামলা করবে আর আমরা আলোচনা করতে বসব। এটা মোদী সরকার, যারা যোগ্য জবাব দেয়।'
অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার মধ্যে আবেগপূর্ণ বক্তব্য
অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার সময় অমিত শাহ সেনা ও সিআরপিএফ-এর সাহসের প্রশংসা করে বলেন, 'আমাদের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের খতম করে দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি সন্ত্রাসবাদীদের চিন্তায় ডুবে থাকে।' তিনি আরও বলেন যে অপারেশন সিন্দুরের মতো অভিযান দেশকে শক্তিশালী করার জন্য জরুরি এবং এতে কোনো ধরনের রাজনীতি হওয়া উচিত নয়।
রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য
অমিত শাহের এই বক্তব্যের পর বিরোধী দলগুলোতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, পার্টি অভ্যন্তরীণ কৌশল তৈরিতে ব্যস্ত। সম্ভাবনা রয়েছে যে কংগ্রেস নেতারা এই বক্তব্য নিয়ে স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন এবং এটিকে 'রাজনৈতিক কুৎসা রটানোর চেষ্টা' বলতে পারেন।