লখনউকে ইউনেস্কোর 'ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি' স্বীকৃতি: মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের 'এক জেলা-এক ব্যঞ্জন' উদ্যোগ

লখনউকে ইউনেস্কোর 'ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি' স্বীকৃতি: মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের 'এক জেলা-এক ব্যঞ্জন' উদ্যোগ

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউকে ইউনেস্কোর ‘ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি’ হিসাবে নির্বাচিত করার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যবাসীদের ‘এক জেলা–এক ব্যঞ্জন’ (One District–One Dish) অভিযানে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

লখনউ: উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ (Lucknow) আরও একবার বৈশ্বিক মঞ্চে তার নবাবী ঐতিহ্য এবং অসাধারণ রন্ধনশৈলী সংস্কৃতির জোরে ইতিহাস তৈরি করেছে। ইউনেস্কো (UNESCO) লখনউকে ‘ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি (Creative City of Gastronomy)’ এর মর্যাদা দিয়েছে। এই অর্জন কেবল শহরের রন্ধনশৈলীর ঐতিহ্যকেই সম্মান জানায় না, বরং ভারতের সমৃদ্ধ খাবার ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়।

এই গৌরবময় ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) রাজ্যবাসীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যে, লখনউকে প্রাপ্ত এই সম্মান সমগ্র উত্তর প্রদেশের স্বাদ ও ঐতিহ্যের বিজয়। তিনি জনগণকে ‘এক জেলা–এক ব্যঞ্জন (One District, One Cuisine)’ অভিযানে যোগ দেওয়ার আবেদন জানান এবং রাজ্যের অনন্য খাবারগুলিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার আহ্বান করেন।

ইউনেস্কো ‘গ্যাস্ট্রোনমি সিটি’ স্বীকৃতি দিল

ইউনেস্কো ৩১ অক্টোবর তাদের ক্রিয়েটিভ সিটিজ নেটওয়ার্ক (UCCN)-এ ৫৮টি নতুন শহরকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে লখনউকে ‘ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি’র মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর আগে, ভারত থেকে হায়দ্রাবাদ ২০১৯ সালে এই শ্রেণীতে স্থান পেয়েছিল। এই সম্মান সেই শহরগুলিকে দেওয়া হয় যারা তাদের খাবার, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে। ঘোষণাটি উজবেকিস্তানের সমরকন্দে আয়োজিত ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনে ‘ওয়ার্ল্ড সিটিজ ডে’ উপলক্ষে করা হয়েছিল।

ইউনেস্কো অনুসারে, লখনউ তার অবধী ব্যঞ্জন (Awadhi Cuisine), ঐতিহ্যবাহী কৌশল এবং আধুনিক গ্যাস্ট্রোনমিক ইনোভেশনের সংমিশ্রণে বিশ্বের রন্ধন-মানচিত্রে একটি অনন্য পরিচয় তৈরি করেছে।

সিএম যোগীর বার্তা: "প্রতিটি জেলার স্বাদ, উত্তর প্রদেশের পরিচয়"

‘লখনউকে প্রাপ্ত এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু একটি শহরের অর্জন নয়, এটি উত্তর প্রদেশের সমগ্র রন্ধনশৈলী ঐতিহ্যের গর্ব। এখন সময় এসেছে যে আমরা আমাদের প্রতিটি জেলার খাবারগুলিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরি।’

তিনি রাজ্যবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা তাদের আশেপাশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলি অনুসন্ধান করুক, বাড়িতে সেগুলি তৈরি করুক এবং ‘এক জেলা-এক ব্যঞ্জন’ অভিযানের আওতায় তাদের ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুক। যোগী বলেছেন যে আমাদের খাদ্যপ্রেম এবং সৃজনশীলতা কেবল পর্যটনকে উৎসাহিত করবে না বরং বিশ্বব্যাপী ভারতীয় খাবারের সফট পাওয়ারকেও শক্তিশালী করবে।

লখনউ এবং ইউপির বিখ্যাত খাবারগুলি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে

সিএম যোগী উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, লখনউ-এর বিখ্যাত চাট এবং কাবাব, বারাণসীর মালইও, মিরাটের গজক, আগ্রার পেঠা, মথুরার পেঁড়া, বাগপতের বালুশাহী, বান্দার সোহন হালুয়া, এবং খুরজার খুরচন আমাদের রাজ্যের স্বাদের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে। তিনি বলেছেন যে প্রতিটি খাবারের নিজস্ব ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে, যা প্রজন্ম ধরে চলে আসা রন্ধন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখে।

রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য হলো ‘এক জেলা–এক ব্যঞ্জন’ (ODOD) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি জেলার পরিচয় তার বিশেষ খাবারের সাথে যুক্ত করে কুলিনারি ট্যুরিজম (Culinary Tourism) কে উৎসাহিত করা। লখনউকে প্রাপ্ত এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখন উত্তর প্রদেশের অন্যান্য শহরগুলির জন্যও অনুপ্রেরণা হবে। সরকার মনে করে যে এর ফলে কেবল রাজ্যের সাংস্কৃতিক অর্থনীতিই শক্তিশালী হবে না, বরং স্থানীয় উদ্যোগ, নারী স্বাবলম্বন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও জোর মিলবে।

Leave a comment