ক্যারিবীয় ঘূর্ণিঝড় মেলিসার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর কিউবা ও জ্যামাইকা ভারত প্রেরিত মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রীর জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
কিংস্টন: ক্যারিবীয় সাগরে আঘাত হানা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় মেলিসা (Hurricane Melissa)-র ধ্বংসযজ্ঞের পর ভারত কিউবা ও জ্যামাইকাকে মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে বিশ্ব মঞ্চে আবারও "বসুধৈব কুটুম্বকম" এর ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। ভারতের এই দ্রুত ও ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে উভয় দেশ বলেছে যে, এই সহায়তা কেবল ভৌত সহযোগিতা নয়, বরং "মানবতার একীভূত চেতনার" একটি উদাহরণ।
কিউবা ও জ্যামাইকার নেতারা ভারত সরকার, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন যে, কঠিন সময়ে ভারতের এই সাহায্য "প্রকৃত বন্ধুত্ব এবং বৈশ্বিক ঐক্যের" প্রতীক।
20 টন ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এবং হাভানা ( Havana) স্থিত ভারতীয় দূতাবাস অনুসারে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমান C-17 গ্লোবমাস্টার দ্বারা প্রায় 20 টন ত্রাণ সামগ্রী কিউবা এবং জ্যামাইকায় পাঠানো হয়েছে। এই ত্রাণ প্যাকেজে ভীষ্ম মেডিকেল ট্রমা ইউনিট, বিদ্যুৎ জেনারেটর, তাঁবু, সোলার ল্যাম্প, রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যবিধি কিট, এবং বিছানাপত্র ও ঔষধপত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিউবার বিদেশ মন্ত্রক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছে,
'আমরা ভারত সরকার এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা ঘূর্ণিঝড় মেলিসায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের মানুষের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং দুটি ‘ভীষ্ম হাসপাতাল ইউনিট’ পাঠিয়েছেন। ভারতের এই পদক্ষেপ আমরা সবসময় মনে রাখব।'
ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে যে এই সহায়তা ভারতের "বসুধৈব কুটুম্বকম – এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ" ধারণার দ্বারা অনুপ্রাণিত, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির "গ্লোবাল সাউথ" নীতির মূল ভিত্তি।
জ্যামাইকা বলেছে – ভারত আবারও মানবিক নেতৃত্ব দেখিয়েছে

জ্যামাইকার বিদেশ মন্ত্রী কামিনা জনসন স্মিথ (Kamina Johnson Smith) X (পূর্বের টুইটার)-এ ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্করকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন,
'ভারতের ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ কেবল G20-র থিম নয়, বরং একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। ভারত সোলার ল্যাম্প, জেনারেটর, মেডিক্যাল সাপ্লাই এবং ‘ভীষ্ম’ ট্রমা কিট পাঠিয়েছে। আমাদের জনগণ এই সমর্থন কখনো ভুলবে না, ঠিক যেমন আমরা ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ মনে রেখেছিলাম।'
বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর তাঁর বার্তার উত্তরে বলেছেন, ভারত এই কঠিন সময়ে জ্যামাইকার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সমবেদনা ও সহযোগিতা সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছে।
ঘূর্ণিঝড় মেলিসার ধ্বংসযজ্ঞ
ঘূর্ণিঝড় মেলিসাকে গত 150 বছরের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় 250 কিমি বেগে বাতাস এবং প্রবল বৃষ্টি জ্যামাইকা, কিউবা ও হাইতিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। এ পর্যন্ত 75 জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (UN) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র পশ্চিম জ্যামাইকাতেই প্রায় 5 মিলিয়ন মেট্রিক টন আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে — যা প্রায় 5 লাখ ট্রাক লোডের সমান। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ে জ্যামাইকার জিডিপির প্রায় 30% ক্ষতি হয়েছে।
কিউবা ও জ্যামাইকা উভয়ই বলেছে যে, ভারতের এই মানবিক সহায়তা তাদের ত্রাণ ও পুনর্গঠন অভিযানকে গতি দিয়েছে। কিউবা সরকার বিবৃতি জারি করে বলেছে, ভারতের এই সহায়তা আমাদের এবং ভারতের মধ্যে মানবিক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে স্থাপিত।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে এই সাহায্য "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মানবতা-কেন্দ্রিক বিদেশ নীতি" এবং "গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সংহতি"র অংশ। মন্ত্রক আরও জানিয়েছে যে, ভারত ভবিষ্যতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।













