ভারতে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিতে প্রস্তুত প্রথম বেসরকারি সংস্থা

ভারতে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিতে প্রস্তুত প্রথম বেসরকারি সংস্থা

হায়দ্রাবাদ-এর অনন্ত টেকনোলজিস নামক একটি সংস্থা এবার ভারতে ইতিহাস তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কোম্পানি দেশের প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে চলেছে, যারা সম্পূর্ণ দেশীয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সরবরাহ করবে। এই পরিষেবাটি ২০২৮ সাল থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পদক্ষেপকে ভারতের মহাকাশ এবং টেলিকম সেক্টরের জন্য একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

IN-SPACE থেকে পরিষেবা শুরু করার অনুমোদন

ভারতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র অর্থাৎ IN-SPACe অনন্ত টেকনোলজিসকে ২০২৮ সাল থেকে স্যাটেলাইট যোগাযোগ পরিষেবা শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে। সংস্থাটি সারা ভারতে হাই-স্পিড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘ব্রডব্যান্ড ফ্রম স্পেস’ মডেলের ওপর কাজ করবে। এর সাথে, অনন্ত টেকনোলজিসের নাম এখন সরাসরি এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক, ইউরোপীয় কোম্পানি ইউরোস্যাট ওয়ানওয়েব এবং অ্যামাজনের প্রজেক্ট কাইপারের মতো আন্তর্জাতিক दिग्গজদের সারিতে যুক্ত হয়েছে।

৪ টনের জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হবে

অনন্ত টেকনোলজিসের পরিকল্পনা হল, তারা ৪ টন ওজনের একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটকে ৩৫,০০০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশে স্থাপন করবে। এই স্যাটেলাইটটি সারা ভারতে একই রকম ইন্টারনেট কভারেজ দেবে। এই একক স্যাটেলাইট থেকে সংস্থাটি ১০০ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ডের হাই-স্পিড ডেটা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

LEO-র তুলনায় GEO স্যাটেলাইট কেন লাভজনক

GEO স্যাটেলাইট, অর্থাৎ জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, একটিমাত্র স্যাটেলাইট সারা দেশকে কভার করতে পারে। এর জন্য বারবার আলাদা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার প্রয়োজন হয় না। এর বিপরীতে, স্টারলিঙ্কের মতো কোম্পানিগুলিকে LEO, অর্থাৎ লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইটের একটি বড় সিরিজ মহাকাশে পাঠাতে হয়, যাতে সম্পূর্ণ কভারেজ পাওয়া যায়।

লেটেন্সি নিয়ে রয়েছে চ্যালেঞ্জ

যদিও GEO স্যাটেলাইটের নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে লেটেন্সি, অর্থাৎ ডেটা ট্রান্সফারে বিলম্বের সমস্যা এতে বেশি দেখা যায়। তবে অনন্ত টেকনোলজিসের দাবি, তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে এবং ব্যবহারকারীরা কোনো বাধা ছাড়াই হাই-স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা পাবেন।

৩,০০০ কোটি টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগ

সংস্থাটি এই প্রকল্পের জন্য শুরুতে ৩,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই অর্থ আরও বাড়ানো হবে। সংস্থার লক্ষ্য হল ভারতের প্রতিটি কোণে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, তা পাহাড়ী এলাকা হোক বা কোনো প্রত্যন্ত গ্রাম।

অনন্ত টেকনোলজিসের এখন পর্যন্ত যাত্রা

অনন্ত টেকনোলজিস ইতিমধ্যেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অর্থাৎ ইসরোর সাথে বেশ কয়েকটি মিশনে কাজ করেছে। এই সংস্থাটি স্যাটেলাইট নির্মাণ, পেলোড সিস্টেম এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের মতো ক্ষেত্রগুলিতে তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এখন সংস্থাটি তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান সরাসরি সাধারণ মানুষের পরিষেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করছে।

তৃতীয় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী হবে স্টারলিঙ্ক

ভারতে এখনও পর্যন্ত দুটি সংস্থা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার দিকে কাজ করছে। স্টারলিঙ্ক আসার পরে এটি তৃতীয় প্রধান সংস্থা হবে যা বাণিজ্যিক স্তরে পরিষেবা দেবে। এর সাথে, অনন্ত টেকনোলজিসকে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাথেও লড়তে হবে।

গ্রাম এবং সীমান্ত অঞ্চলগুলি উপকৃত হবে

ভারত-এর মতো একটি দেশে, যেখানে প্রত্যন্ত গ্রাম এবং সীমান্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক পৌঁছয়নি, সেখানে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন প্রযুক্তি (Satcom) বিপ্লবী হতে পারে। অনন্ত টেকনোলজিসের পরিকল্পনাও এই ধরনের অঞ্চলগুলিতে হাই-স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা। এর ফলে কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে না, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলিও গ্রামগুলিতে সহজে পৌঁছানো যাবে।

সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বে মহাকাশ ক্ষেত্রের উন্নতি হবে

IN-SPACe-এর মতো সংস্থাগুলি বেসরকারি সংস্থাগুলিকে মহাকাশ ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এর আগে এই ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণরূপে সরকারি নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বেসরকারি সংস্থাগুলির আগমনের ফলে এই সেক্টরে উদ্ভাবন এবং দ্রুত অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। অনন্ত টেকনোলজিসের এই উদ্যোগ সেই দিকেই একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a comment