অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ₹১৭,০০০ কোটির ব্যাংক ঋণ প্রতারণার অভিযোগ। ইডি তদন্ত শুরু করেছে। একাধিক ব্যাংক ও কোম্পানির থেকে নথি নেওয়া হয়েছে। তদন্ত এখন দ্রুত গতিতে চলছে।
Anil Ambani ED Case: রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ১৭,০০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ প্রতারণা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই জিজ্ঞাসাবাদটি নতুন দিল্লির ইডি অফিসে হচ্ছে। অনিল আম্বানি মঙ্গলবার সকালে মুম্বাই থেকে দিল্লি পৌঁছন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেন।
কিভাবে শুরু হল তদন্ত
ইডি প্রাথমিক তদন্তে ইয়েস ব্যাংক থেকে ৩,০০০ কোটি টাকার অবৈধ ঋণ হস্তান্তরের তথ্য পেয়েছে, যা ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল। এর পর তদন্তকারী সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের সঙ্গে যুক্ত ১৪,০০০ কোটি টাকার ঋণ প্রতারণার হদিস পায়। এই দুটি মামলাকে যুক্ত করে এখন মোট ১৭,০০০ কোটি টাকার ঋণ প্রতারণার তদন্ত করা হচ্ছে।
ইডির তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত
২৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া তল্লাশিতে ইডি দিল্লি ও মুম্বাইয়ের ৩৫টি ঠিকানায় তিন দিন ধরে অভিযান চালায়। এই ঠিকানাগুলি ৫০টি কোম্পানি ও ২৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তল্লাশিতে একাধিক ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, নথি ও হার্ড ড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অনিল আম্বানির কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক ও পরিচালকদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছে তথ্য
ইডি ১২টির বেশি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়ে ঋণ লেনদেন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার তথ্য জানতে চেয়েছে। এই ব্যাংকগুলির মধ্যে রয়েছে এসবিআই, অ্যাক্সিস ব্যাংক, আইসিআইসিআই ব্যাংক, এইচডিএফসি ব্যাংক, ইউকো ব্যাংক এবং পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধু ব্যাংক। তদন্তের মূল লক্ষ্য হল, কোন পরিস্থিতিতে অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলিকে এত বড় অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, তা জানা।
ইডির প্রথম গ্রেফতারি
এই মামলায় ইডি প্রথম গ্রেফতারি করে ১ আগস্ট। বিস্বাল ট্রেডলিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি পার্থ সারথি বিস্বালকে ৬৮.২ কোটি টাকার জাল ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, এই গ্যারান্টি রিলায়েন্স পাওয়ারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
সিবিআই-এর পদক্ষেপের পর সক্রিয় ইডি
এই মামলায় প্রথম সিবিআই দুটি এফআইআর দায়ের করে। এই এফআইআর-এর ভিত্তিতে ইডি মানি লন্ডারিং আইনের অধীনে মামলা রুজু করে। অভিযোগ, ইয়েস ব্যাংক অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলিকে যে ঋণ দিয়েছিল, তাতে গুরুতর অনিয়ম ছিল এবং এর মধ্যে কিছু ঋণ ভুয়ো কোম্পানির নামে দেওয়া হয়েছিল।
অনিয়মের পর্দাফাঁস
ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে একাধিক দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়েছে। যেমন:
- আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে যাচাই না করে ঋণ দেওয়া
- ঋণ গ্রহণকারী কোম্পানিগুলিতে একই পরিচালক ও ঠিকানা থাকা
- নথির অভাব
- পুরনো ঋণ পরিশোধ করার জন্য নতুন ঋণ দেওয়া
- শেল কোম্পানিগুলিতে তহবিল হস্তান্তর করা
সেবি (SEBI)-এর রিপোর্টেও রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেডে গুরুতর অনিয়মের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে যেখানে কর্পোরেট ঋণ পোর্টফোলিও ৩,৭৪২ কোটি টাকা ছিল, সেটি ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে ৮,৬৭০ কোটি টাকা হয়ে যায়।
শেয়ার বাজারে প্রভাব
ইডি-র পদক্ষেপের পর অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলির শেয়ারের দর দ্রুত পড়েছে। রিলায়েন্স পাওয়ার ও রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার উভয়ের শেয়ারেই লোয়ার সার্কিট লেগেছে। গত পাঁচ দিনে রিলায়েন্স পাওয়ারের শেয়ার ১১% পর্যন্ত পড়েছে, যেখানে রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের শেয়ারে ১০% পতন হয়েছে।
রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিক্রিয়া
রিলায়েন্স পাওয়ার ও রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ২৬ জুলাই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে যে ইডি-র পদক্ষেপের ফলে তাদের ব্যবসা, আর্থিক কর্মক্ষমতা বা স্টেকহোল্ডারদের উপর কোনও প্রভাব পড়েনি। তারা আরও জানিয়েছে যে তারা তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
অন্যান্য নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকা
ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাংক (NHB), সেবি, ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি (NFRA) এবং ব্যাংক অফ বরোদা তাদের অনুসন্ধান ইডি-কে দিয়েছে। এতে মামলার গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে।
অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ
ইডি অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারি করেছে, যাতে তিনি দেশ ছেড়ে বাইরে যেতে না পারেন। এর আগে এসবিআই রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও অনিল আম্বানিকে ফ্রড অ্যাকাউন্ট ঘোষণা করেছিল।