আগস্ট ২০২৫-এর বাণিজ্য পরিসংখ্যান: আমেরিকার কাছে চীনকে ছাড়িয়ে গেল ভারত

আগস্ট ২০২৫-এর বাণিজ্য পরিসংখ্যান: আমেরিকার কাছে চীনকে ছাড়িয়ে গেল ভারত

আগস্ট ২০২৫-এর বাণিজ্য পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারতের জন্য আমেরিকা চীনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৫০% শুল্ক সত্ত্বেও, আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে ৬.৮৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে, চীনের সাথে ভারতের ৯.৬৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে, যেখানে আমেরিকার সাথে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল।

নয়াদিল্লি: ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত আগস্ট ২০২৫-এর বাণিজ্য পরিসংখ্যান দেখিয়েছে যে আমেরিকা ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা সত্ত্বেও, ভারত আগস্ট মাসে আমেরিকায় ৬.৮৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭% বেশি। অন্যদিকে, চীনে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১.২১ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আমদানি হয়েছে ১০.৯ বিলিয়ন ডলার, যার ফলে ভারতের বিশাল লোকসান হয়েছে। এর বিপরীতে, আমেরিকা থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৩.৬ বিলিয়ন ডলার, যার ফলে ভারতের প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের লাভ হয়েছে।

আগস্টে আমেরিকায় সর্বোচ্চ রপ্তানি

বাণিজ্য মন্ত্রক অনুসারে, আগস্ট মাসে ভারতের আমেরিকায় রপ্তানি প্রায় ৬.৮৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। জুলাই মাসের তুলনায় এটি প্রায় ১৪% কমেছে। জুলাই মাসে এই অঙ্ক ছিল আট বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও, আগের বছরের তুলনায় আমেরিকায় ভারতীয় রপ্তানি ৭.১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অর্থ হল, গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় ভারত আমেরিকায় বেশি পণ্য বিক্রি করেছে।

ভারতের রপ্তানি বাজারে আমেরিকা সবার উপরে রয়েছে, যেখানে চীন অনেক পিছিয়ে। আগস্ট মাসে ভারত চীনে মাত্র ১.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক আমেরিকার তুলনায় অত্যন্ত কম। শুধু তাই নয়, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং নেদারল্যান্ডসও চীনের চেয়ে এগিয়ে গেছে। ভারত আগস্ট মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ৩.২৪ বিলিয়ন ডলার এবং নেদারল্যান্ডসে ১.৮৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। চীনের পরে রয়েছে ব্রিটেন, যেখানে ভারত ১.১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠিয়েছে।

আমেরিকান শুল্ক সত্ত্বেও শক্তিশালী বাণিজ্য

আগস্ট মাসে, মার্কিন প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর দুই দফায় শুল্ক বাড়িয়েছে। প্রথমে ৭ আগস্ট ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয় এবং তারপর ২৭ আগস্ট অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক যোগ করা হয়। এইভাবে মোট ৫০% শুল্ক কার্যকর হয়। তা সত্ত্বেও, আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। এটি দেখায় যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা শক্তিশালী।

চীন থেকে সবচেয়ে বড় ঘাটতি

অন্যদিকে, চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিতে ছিল। আগস্ট মাসে ভারত যেখানে চীনে মাত্র ১.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে, সেখানে চীন থেকে ১০.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে। এর অর্থ হল, ভারতের চীনের সাথে বাণিজ্যে ৯.৬৯ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি হয়েছে। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ঘাটতি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

রাশিয়া এবং উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে বাণিজ্য

ভারত আগস্ট মাসে রাশিয়া থেকে ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে ৪.৬৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। সৌদি আরব থেকে ভারত ২.৫২ বিলিয়ন ডলার আমদানি করেছে।

আমেরিকা থেকে লাভ

আমেরিকার সাথে ভারতের বাণিজ্য ভারসাম্য ইতিবাচক ছিল। আগস্ট মাসে ভারত আমেরিকায় ৬.৮৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে, যেখানে আমেরিকা থেকে মাত্র ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। অর্থাৎ, ভারত আমেরিকার সাথে প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের লাভ করেছে। এই অঙ্ক স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে আমেরিকা কেবল ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজারই নয়, সবচেয়ে বেশি লাভ প্রদানকারী অংশীদারও।

ভারতের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব

এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারতের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের জন্য আমেরিকার ভূমিকা চীনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীন থেকে বিপুল আমদানি ভারতকে বড় ঘাটতিতে ফেলেছে, অন্যদিকে আমেরিকা ভারতকে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য ভিত্তি প্রদান করেছে। এই কারণেই সরকারি পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী সময়ে ভারতের জন্য আমেরিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে।

Leave a comment