নেপালে জাতীয় শোক: Gen-Z Protest-এর নিহতদের শহীদ মর্যাদা ও ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা

নেপালে জাতীয় শোক: Gen-Z Protest-এর নিহতদের শহীদ মর্যাদা ও ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই বড় সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। Gen-Z Protest-এ নিহত তরুণদের শহীদের মর্যাদা এবং তাঁদের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।

নেপাল মন্ত্রিসভা: নেপালের রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। সুশীলা কার্কি সম্প্রতি কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী (Interim Prime Minister) হিসেবে শপথ নিয়েছেন এবং শপথ গ্রহণের পরেই অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার প্রথম এবং ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হল যে ১৭ সেপ্টেম্বর নেপালে জাতীয় শোক (National Mourning Day) পালন করা হবে। এই দিনটি সেই তরুণদের উৎসর্গ করা হবে, যারা সম্প্রতি Gen-Z Protest-এর সময় প্রাণ হারিয়েছেন।

জাতীয় শোকের ঘোষণা

মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছে যে ১৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জাতীয় শোক পালন করা হবে। এই দিন নেপালের সমস্ত সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শুধু নেপালেই নয়, বিদেশে অবস্থিত নেপালি দূতাবাসগুলিতেও পতাকা অর্ধনমিত রেখে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

শহীদ পরিবারদের আর্থিক সহায়তা

সুশীলা কার্কির মন্ত্রিসভা শহীদ পরিবারদের জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী কার্কি ১০ লক্ষ নেপালি টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এই আর্থিক সহায়তা সেই পরিবারগুলির জন্য যারা আন্দোলনে নিজেদের সন্তানদের হারিয়েছেন। এছাড়াও, আহত তরুণ এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদেরও সরকার পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ

কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুশীলা কার্কি প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন যে এই পদটি তাঁর জন্য গর্বের বিষয় নয় বরং একটি বড় দায়িত্ব। কার্কি বলেছেন যে দেশ এমন এক সময় থেকে যাচ্ছে যখন হিংসা এবং অশান্তি গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তিনি Gen-Z Protest-এর উল্লেখ করে বলেন যে নেপাল ২৭ ঘন্টা ধরে এমন হিংসা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ দেখেছে যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবার।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

নেপালে Gen-Z Protest-এর সূচনা হয়েছিল তরুণদের নেতৃত্বে। এই বিক্ষোভ বিভিন্ন ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করার জন্য শুরু হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আন্দোলনে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশিরভাগই ছিল কলেজ এবং স্কুলের বয়সের ছাত্র ও তরুণ-তরুণী।

সুশীলা কার্কির ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

সুশীলা কার্কি কেবল এই পরিস্থিতিতেই নেপালের শাসনভার গ্রহণ করেননি, তিনি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন। এটি নিজেই এক ইতিহাস। কঠিন পরিস্থিতিতে শাসনভার গ্রহণ করে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি সেই সব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে নিহত তরুণদের সরকারিভাবে শহীদ ঘোষণা করা হবে এবং তাদের পরিবারকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে।

মন্ত্রিসভার অন্যান্য সিদ্ধান্ত

মন্ত্রিসভা মন্ত্রণালয়গুলিকে Gen-Z Protest-এর সময়কার ক্ষতির একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি, সরকারি ভবন এবং পরিকাঠামোর ক্ষতির সম্পূর্ণ মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকার স্পষ্ট করেছে যে এই আন্দোলন দেশকে গভীর আঘাত দিয়েছে এবং এখন অগ্রাধিকার হল দেশকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

৭২ জনের মৃত্যু

দ্য হিমালয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালে এই বিক্ষোভ প্রদর্শনে এ পর্যন্ত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্কি বলেছেন যে তিনি সেই পরিবারগুলির যন্ত্রণা গভীরভাবে অনুভব করেন যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তাঁর মতে, এই আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক বা সামাজিক নয়, এটি একটি মানবিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

নেপালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচিত হচ্ছে। বিদেশে বসবাসকারী নেপালি নাগরিকরাও এই আন্দোলন এবং হিংসায় দুঃখিত। এই কারণেই মন্ত্রিসভা বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলিতেও পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করে যে সরকার এই বিষয়টিকে কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, বৈশ্বিক স্তরেও স্বীকৃতি দিচ্ছে।

সুশীলা কার্কির আবেদন

তাঁর ভাষণে সুশীলা কার্কি তরুণদের কাছে আবেদন করেছেন যে তারা হিংসার পথ ছেড়ে সংলাপ ও সহযোগিতার পথ বেছে নিক। তিনি বলেছেন যে গণতন্ত্রে প্রতিবাদ করার অধিকার আছে, কিন্তু তা তখনই সার্থক হয় যখন তা শান্তির সাথে করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে তাঁর সরকার তরুণদের সকল উদ্বেগ গুরুত্ব সহকারে শুনবে এবং সমাধান বের করবে।

Leave a comment