১৬ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে নতুন দিল্লিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আয়ুষ মন্ত্রক এবং আয়ুষ এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল (AYUSHEXCIL) ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের (MSME) ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল MSME-গুলির জন্য বর্তমান স্কিম এবং বিনিয়োগের সুযোগগুলি তুলে ধরা।
এই আলোচনামূলক সেশনটির নাম ছিল “Fostering Growth: SME Schemes and Opportunities for the Ayush Industry”, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য খুলছে নতুন দরজা
সেশনটি শুরু করেন ডঃ কৌস্তভ উপাধ্যায় (উপদেষ্টা, আয়ুষ মন্ত্রক)। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে MSME-গুলি যদি সঠিক দিশা এবং সমর্থন পায়, তাহলে আয়ুষ ক্ষেত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাঁর মতে, ছোট উদ্যোগগুলিতে দ্রুত উদ্ভাবনের ক্ষমতা রয়েছে এবং এটাই এই ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
এরপর অনুজা বাপাট (যুগ্ম সচিব, MSME মন্ত্রক) একটি বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন দেন, যেখানে MSME মন্ত্রকের কোন কোন স্কিমগুলি আয়ুষ শিল্পের জন্য উপকারী হতে পারে, তা জানানো হয়। তিনি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন যে তারা যেন এই সরকারি স্কিমগুলির পুরো সুবিধা নেয় এবং তাদের ব্যবসাকে শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এগিয়ে নিয়ে যায়।
এই আলোচনায় আরও উঠে আসে যে MSME-গুলির শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, মার্কেট অ্যাক্সেস, গুণগত মান উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারও প্রয়োজন।
ঔষধি উদ্ভিদে লুকানো বড় সম্ভাবনা
সেশন চলাকালীন ন্যাশনাল মেডিসিনাল প্ল্যান্টস বোর্ড (NMPB)-এর CEO অধ্যাপক (ড.) মহেশ কুমার দাঢীচ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি সি-বকথর্ন-এর মতো ঔষধি গাছের উপযোগিতা নিয়ে কথা বলার সময় জানান যে কীভাবে এগুলি আয়ুষ ভিত্তিক উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তাঁর বিশ্বাস, ভারতের কাছে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান এবং জীববৈচিত্র্যের যে পুঁজি রয়েছে, তাকে সঠিক গবেষণা এবং উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে এই পুরো ক্ষেত্রটি আত্মনির্ভরতার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে।
একই সেশনে ছত্তিশগড় সরকারের ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার ঋতু সাইনি রাজ্যে বিদ্যমান বিনিয়োগের সুযোগগুলি সম্পর্কে তথ্য দেন। তিনি জানান যে রাজ্য সরকার কীভাবে আয়ুষ ভিত্তিক শিল্পগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য নীতি এবং পরিকাঠামো তৈরি করছে।
গুণমান এবং স্কেলেবিলিটির উপর সবচেয়ে বেশি জোর
সেশনের শেষে আয়ুষ মন্ত্রকের সচিব বৈদ্য রাজেশ কোটেচা এবং MSME মন্ত্রকের সচিব এস.সি.এল. দাস একসঙ্গে এই কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেন যে এখন সময় এসেছে কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডকে শক্তিশালী করা এবং আয়ুষ ক্ষেত্রকে স্কেলেবল করে তোলার।
দুই আধিকারিক বলেন যে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এটাই সঠিক সময় এবং এতে MSME-গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তাঁরা আরও বলেন যে সরকার এই বিষয়ে সম্ভাব্য সকল প্রকার নীতিগত সমর্থন দিতে প্রস্তুত, তবে শিল্প এবং স্টার্টআপগুলিকে সততার সঙ্গে তাদের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে।
পুরো ইন্ডাস্ট্রির ঐক্যবদ্ধতা
এই পুরো সেশন থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে – ইন্ডাস্ট্রি, সরকার এবং বিনিয়োগকারী, তিনজনই একই দিকে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছেন। MSME-গুলির শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, প্রযুক্তি, বাজার এবং গুণগত মান উন্নয়নেরও প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা এই বিষয়ে একমত হন যে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানকে আধুনিক বিজনেস মডেলের সঙ্গে যুক্ত করার সময় এসে গেছে এবং এর জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন এবং গ্রাসরুট স্তরের উদ্যোক্তাদের বড় ভূমিকা থাকবে।
সেশনটি এই সংকল্পের সাথে সমাপ্ত হয় যে আয়ুষ ক্ষেত্রকে টেকসই, উদ্ভাবনী এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য এখন প্রতিটি স্তরে সহযোগিতা করা হবে।