এই গল্পটি একটি সাধারণ গ্রামের পরিবারের, যেখানে একজন পরিশ্রমী বাবা এবং তাঁর বুদ্ধিমান ছেলে বাস করত। বাবার নাম ছিল হরিশংকর এবং ছেলের নাম ছিল আদিত্য। হরিশংকর গ্রামে একটি ছোট কাঠের কারখানায় মজুরি করতেন। তাদের বেশি টাকা ছিল না, কিন্তু ছেলের প্রতিটি প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করতেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে পড়াশোনা করে বড় অফিসার হোক এবং ভালো জীবন যাপন করুক।
বাবার সংগ্রাম, ছেলের স্বপ্ন
হরিশংকর প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে উঠতেন, পুরনো সাইকেলে চড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাজে যেতেন। সারাদিন কাঠ বহন করতেন, ধুলো এবং ঘামে ভিজে ফিরতেন, কিন্তু মুখে হাসি থাকত—কারণ মনে একটাই স্বপ্ন ছিল, 'আমার ছেলে পড়াশোনা করে কিছু করবে।' আদিত্যও ছিল বুদ্ধিমান। সে জানত তার বাবা কতটা কষ্ট করেন। সে দিনরাত মন দিয়ে পড়াশোনা করত, কখনও অভিযোগ করত না এবং প্রতিটি ছোট জিনিসের যত্ন নিত।
এক জোড়া পুরোনো জুতো এবং ছেলের চোখ
একদিন আদিত্যর স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার ভালো জুতো ছিল না। সে বাবাকে কিছু বলেনি, কারণ জানত তাদের কাছে টাকা নেই। কিন্তু হরিশংকর ছেলের চোখ থেকে তার আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারলেন। তিনি নিজের খাওয়া ত্যাগ করে অতিরিক্ত কাজ করলেন এবং একটি পুরনো দোকান থেকে জুতো কিনে আনলেন। জুতো পেয়ে আদিত্যর চোখ খুশিতে চকচক করে উঠল এবং সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, 'বাবা, তুমি আমার হিরো।'
প্রথম বড় সাফল্য
রাহুল ছিল একটি সাধারণ পরিবারের ছেলে। তার বাবা রোজ সকালে উঠে কঠোর পরিশ্রম করতেন যাতে রাহুলের পড়াশোনা এবং প্রয়োজনগুলি পূরণ করা যায়। রাহুল জানত যে বাবা তার স্বপ্নগুলো ত্যাগ করে তার জন্য সবকিছু করেছেন। যখনই সে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরত, বাবা হেসে বলতেন, 'একটু বিশ্রাম নে, কাল আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।'
একদিন স্কুলে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ছিল। রাহুল বাবার উপর একটি বক্তৃতা দিল এবং সবাইকে আবেগাপ্লুত করে তুলল। সে প্রথম পুরস্কার পেল। যখন সে ট্রফি নিয়ে বাড়ি এল, বাবার চোখে জল ছিল। রাহুল বলল, “এই ট্রফিটা তোমার, বাবা, কারণ তুমি আমার আসল হিরো।” সেই দিন বাবা-ছেলের প্রেম এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেল।
সময়ের পরীক্ষা
হরিশংকর ছিলেন একজন সৎ ও পরিশ্রমী পিতা, যিনি ছেলের ভবিষ্যতের জন্য নিজের সমস্ত সুখ ত্যাগ করেছিলেন। তিনি নিজে যতই ক্লান্ত হোন না কেন, তিনি কখনও তার ছেলের স্বপ্ন অপূর্ণ রাখেননি। তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল তাঁর ছেলে, এবং তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎই ছিল তাঁর স্বপ্ন।
আদিত্য যখন বৃত্তি পেল, তখন কিছুটা স্বস্তি এল, কিন্তু অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য বাবার পরিশ্রমই ছিল সবচেয়ে বড় আশ্রয়। তিনি সময়মতো খেতে বসতেন না, তবে ছেলের ফি সময়মতো জমা দেওয়া যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতেন। আদিত্য এসব বুঝত, তাই সেও পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিত।
ছেলে অফিসার হল, বাবা গর্বিত হলেন
হরিশংকরের জীবনের সবচেয়ে সোনালী মুহূর্তটি এসেছিল যখন তাঁর ছেলে আদিত্য ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। এই সেই ছেলে, যার জন্য তিনি নিজের সমস্ত প্রয়োজন, সমস্ত আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছিলেন। গ্রামে যখন খবর গেল, তখন সবাই অভিনন্দন জানাতে এল। মিষ্টিমুখ চলল এবং লোকেরা বলতে লাগল, 'হরিশংকর জি, আপনার ছেলে তো গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে।'
হরিশংকর আবেগাপ্লুত হয়ে হাসলেন এবং বললেন, 'এটা তার পরিশ্রমের ফল।' কিন্তু তাঁর হৃদয়ে অন্যরকম একটা সন্তুষ্টি ছিল। তিনি তাঁর ছেলেকে সংগ্রাম থেকে সাফল্যের দিকে যেতে দেখেছিলেন। এটা কেবল ছেলের জয় ছিল না, বাবারও জয় ছিল। এটাই তো আসল পিত-পুত্রের সম্পর্ক—ত্যাগ ও পরিশ্রমে গড়া, প্রেম ও গর্বে পরিপূর্ণ।
ছেলে বাবার ঋণ শোধ করল
যখন আদিত্য প্রথম বেতন পেল, তখন সে দেরি না করে বাবার জন্য একটি নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা, চপ্পল, ঘড়ি এবং চশমা কিনল। এছাড়াও, বাবার বিশ্রামের জন্য একটি চেয়ার নিয়ে এল এবং হেসে বলল, 'বাবা, এবার আপনি কাজ করবেন না, এবার আপনি বিশ্রাম নেবেন। এবার আমার সময় আপনাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার।' এই মুহূর্তটি হরিশংকরের জীবনের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ এবং গর্বের মুহূর্ত ছিল, যখন তিনি অনুভব করলেন যে তাঁর ছেলে কেবল ঋণ শোধ করেনি, বরং তাঁর বছরের পর বছরের সংগ্রামকে সম্মানও জানিয়েছে।
সম্পর্কের আসল সম্পদ
আজকের দিনে মানুষ কাজ এবং দৌড়ঝাঁপে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে তাদের বাবা-মাকে সময় দিতে ভুলে যায়। কিন্তু আদিত্যর মতো ছেলেরা মনে করিয়ে দেয় যে, আসল ভালোবাসা সেটাই যা তার শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। প্রতি মাসে বাবাকে ফোন করা, ছুটিতে গ্রামে যাওয়া এবং তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানো—এটাই সম্পর্কের আসল সম্পদ, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
পিতা ও পুত্রের সম্পর্ক কেবল রক্তের নয়, এটি ত্যাগ, প্রেম, সংগ্রাম এবং সম্মান দিয়ে গঠিত। একজন বাবা নিজে না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু ছেলেকে শিক্ষিত করে উচ্চ আসনে দেখতে চায়। অন্যদিকে, ছেলে যদি সেই ত্যাগ বোঝে এবং সারা জীবন সেই প্রেমকে স্মরণ করে—তবে এই সম্পর্কটাই সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে শক্তিশালী হয়।