এই প্রকল্পের ঘোষণাটি অর্থবর্ষ ২০২২-এর কেন্দ্রীয় বাজেটে করা হয়েছিল এবং জুলাই ২০২১-এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়া যায়।
সমুদ্রপথে বিশ্ব বাণিজ্য (Global Trade)-এ ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকার একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার প্রায় ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০টি নতুন ভারতীয় ফ্ল্যাগযুক্ত জাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এই জাহাজগুলি ভারতের শিপইয়ার্ডগুলিতে তৈরি করা হবে এবং সরকারি ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির অধীনে থাকবে।
এর আগে, কেন্দ্র সরকার অর্থবর্ষ ২০২২-এর বাজেটে অভ্যন্তরীণ শিপিং-এর উন্নতি করার জন্য একটি প্রকল্প এনেছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ সফল হয়নি। এই ব্যর্থতার কারণেই সরকার নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে ভারত সমুদ্র বাণিজ্যে স্বনির্ভর হতে পারে।
সরকারি মন্ত্রকগুলির সম্মিলিত প্রয়োজনীয়তা
শিপিং মন্ত্রকের মতে, পেট্রোলিয়াম, ইস্পাত এবং সার মন্ত্রকগুলি ভারতীয় ফ্ল্যাগযুক্ত জাহাজের চাহিদা জানিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই তিনটি মন্ত্রক প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন গ্রস টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি নতুন জাহাজের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছে। এই জাহাজগুলি তৈরি করতে আনুমানিক ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে।
এই জাহাজগুলি প্রধানত অপরিশোধিত তেল, এলপিজি, কয়লা এবং সার-এর মতো ভারী পণ্য আমদানি-রফতানির কাজে ব্যবহৃত হবে। এর ফলে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলির উপর দেশের নির্ভরতা কমবে এবং ভারতীয় জাহাজগুলি বিশ্ব বাজারে আরও বেশি অংশীদারিত্ব লাভ করবে।
পুরোনো পরিকল্পনা কীভাবে ব্যর্থ হল
অর্থবর্ষ ২০২২-এ ঘোষিত প্রকল্পের অধীনে, ভারতীয় ফ্ল্যাগযুক্ত জাহাজগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ১,৬২৪ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছিল। এর অধীনে ভারতীয় শিপিং কোম্পানিগুলিকে ১৫% পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়ার কথা ছিল, যাতে তারা বিশ্ব দরপত্রে অংশ নিতে পারে।
যদিও রিপোর্ট বলছে যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩০ কোটি টাকার বিতরণ করা হয়েছে এবং ভারতীয় ফ্ল্যাগযুক্ত জাহাজের বাজার অংশীদারিত্ব এখনও প্রায় ৮%-এ আটকে আছে। ১৯৮০-এর দশকে এই অংশীদারিত্ব ৪০% এর বেশি ছিল, যা এখন অনেক কমে গেছে।
বিদেশি জাহাজে দেশের বিপুল খরচ
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলিকে ভারত প্রতি বছর প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। এর কারণ হল, ভারতে তৈরি বা ভারত দ্বারা পরিচালিত জাহাজের সংখ্যা খুবই কম।
২০২৩-২৪ সালে ভারতীয় বন্দরগুলি ১৫৪০.৩৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭.৫% বেশি। কিন্তু এই ক্রমবর্ধমান পণ্য পরিবহনে ভারতীয় জাহাজগুলির অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য।
ভারতীয় জাহাজে খরচ বেশি কেন?
ভারতীয় ফ্ল্যাগযুক্ত জাহাজ পরিচালনা করা সহজ নয়। এগুলিতে ভারতীয় নাবিক নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক, এছাড়াও অভ্যন্তরীণ কর এবং কোম্পানি আইনগুলিও মেনে চলতে হয়। এর ফলে তাদের পরিচালন খরচ প্রায় ২০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
এছাড়াও, ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে জাহাজ আমদানির উপর ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি দিতে হয়, যার ক্রেডিটও আটকে যায়। অন্যদিকে, দুটি ভারতীয় বন্দরের মধ্যে পরিষেবা প্রদানকারী জাহাজের উপর অতিরিক্ত জিএসটি-ও ধার্য করা হয়, যেখানে এই নিয়মগুলি বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
শিল্প সংস্থাগুলির দাবি
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল শিপওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিইও অনিল দেবলী বলেছেন যে সরকারের উচিত ভারতীয় জাহাজের উপর আরোপিত কর এবং শুল্ক হ্রাস করা। তাঁর মতে, বিদেশি জাহাজের তুলনায় ভারতীয় জাহাজের প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে যায়, কারণ তাদের উপর বেশি বোঝা চাপানো হয়।
শিল্প সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে এই দাবি জানাচ্ছে যে ভারতীয় জাহাজগুলিকে কর ছাড় দেওয়া হোক এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হোক, যাতে ভারত সমুদ্র বাণিজ্যে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হতে পারে।