ঢাকায় মুখোমুখি বৈঠক
রবিবার ঢাকায় বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। প্রথম থেকেই এই বৈঠককে ঘিরে আলোচনায় ছিল দুই দেশের ভারতবিরোধী অবস্থানকে শক্ত করার সম্ভাবনা। কিন্তু বৈঠক শেষে দেখা গেল, প্রত্যাশার ঠিক উল্টো ছবি। প্রকাশ্যে এল দুই দেশের অবস্থানের তীব্র অমিল।
পাকিস্তানের দাবি, সমাধান হয়ে গিয়েছে সমস্যা
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইশাক দার দাবি করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যাগুলি সমাধান হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুই ভাইয়ের মতো, এক পরিবারের সদস্য। অতীতের সমস্যাগুলি ১৯৭৪ সালের নথি ও পরবর্তী সময়ে জেনারেল মুশারফের উদ্যোগে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের উচিত অর্থনীতি ও বাণিজ্যে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া।
তৌহিদের কড়া প্রতিবাদ
কিন্তু ঠিক তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দেন, কোনও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাঁর বক্তব্য, "আমি অবশ্যই একমত নই। একমত হলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। এখনও ক্ষতিপূরণ, গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, আটকে পড়া মানুষের ফেরত পাঠানো—এসবই অমীমাংসিত থেকে গিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছি।
১৯৭১-এর ক্ষত এখনও অমোচনীয়
বাংলাদেশ বরাবরই দাবি করে এসেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক সেনাদের নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সম্পদের ভাগ ও ক্ষতিপূরণও ঢাকা সরকারের অন্যতম দাবি। অথচ ইশাক দারের বক্তব্যে যেন সেই দাবিগুলি একেবারেই উপেক্ষিত। এই কারণেই তৌহিদের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ভারতবিরোধী পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার পরিকল্পনা ছিল অন্যতম ইস্যু। কিন্তু বৈঠকের পরপরই যখন প্রকাশ্যে দুই পক্ষের অবস্থান বিপরীত হয়ে গেল, তখন কার্যত ভেস্তে গেল ইসলামাবাদের প্রথম প্রচেষ্টা। বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের ক্ষত না মুছে ভারতবিরোধী মঞ্চ তৈরি করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক বার্তা
ঢাকার তরফে এই স্পষ্ট উচ্চারণ একধরনের কূটনৈতিক বার্তাই বটে। অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হল যে, ভারতবিরোধিতার হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা যাবে না। বরং অতীতের দায় মেনে নিয়ে সত্যিকারের সম্পর্ক পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নিলে তবেই দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের সেতু তৈরি হবে।
ভবিষ্যতের পথে প্রশ্নচিহ্ন
বৈঠকের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আদৌ কোন পথে এগোবে? আপাতত দুই দেশের বক্তব্যের ফারাকই স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে একসুরে কথা বলার আগে নিজেদের ইতিহাসের দায় মেটানো ছাড়া উপায় নেই ইসলামাবাদের। আর সেই দায় এড়িয়ে যাওয়ার কৌশলেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হল ঢাকায়।