বাঁকুড়ার গাংদুয়া জলাধার প্রকৃতির আঁচলে নীলিমার স্নান

বাঁকুড়ার গাংদুয়া জলাধার প্রকৃতির আঁচলে নীলিমার স্নান

বর্ষায় নীল রূপে সেজে ওঠে গাংদুয়া ড্যাম

বাঁকুড়া মানেই মুকুটমণিপুর বা শুশুনিয়া পাহাড়—এটাই পর্যটকদের চেনা ছবি। কিন্তু অগোচরে লুকিয়ে আছে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের জায়গা, গাংদুয়া ড্যাম। শালী নদীর বুকে তৈরি এই সেচ জলাধার বর্ষার দিনে যেন একেবারে রূপকথার ছবির মতো। মেঘের ফাঁক দিয়ে নামা আলো, হাওয়ায় ভেসে আসা জলের গন্ধ আর পাহাড়ি নীরবতার মধ্যে এই ড্যামের সৌন্দর্য যেন ভ্রমণপ্রেমীদের হৃদয় চুরি করে নেয়।

মাত্র ৩০০ টাকায় থাকা, বাজেটবান্ধব ভ্রমণ

গাংদুয়ার পাশে সুলভ মূল্যে রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। মাত্র ৩০০ টাকার মতো খরচে মিলবে থাকার ঘর, যা বাজেট পর্যটকদের জন্য এক দারুণ বিকল্প। শহরের বিলাসবহুল রিসর্ট বা দামী হোটেল নয়, এখানে প্রকৃতির কাছে থাকাই প্রধান আকর্ষণ। ড্যামের ধারে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ঝরঝরে বৃষ্টির শব্দ শোনা কিংবা মেঘলা আকাশে ভেসে থাকা নীল জলের দিকে তাকিয়ে থাকা—এই অভিজ্ঞতা যে কারও মনে ছাপ ফেলবেই।

সারা বছরই অন্যরকম সৌন্দর্য, তবে বর্ষায় অন্য মাধুর্য

বছরের অন্য সময়ে গাংদুয়া জলাধার শান্ত, স্থির, নীল জলে ভরা। তবে বর্ষা এলেই এই নীল জল যেন প্রাণ পায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই জলাধার তখন একেবারে রূপসী যুবতীর মতো সাজে। চারিদিকে সবুজ, আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ, আর জলের ঢেউয়ে ঝিলিক—পুজোর আগে এই রূপসৌন্দর্যই পর্যটকদের টেনে আনে এখানে।

ফটোপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য

যারা ক্যামেরা নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁদের জন্য গাংদুয়া ড্যাম স্বপ্নের জায়গা। জলাধারের ধারে বড় বড় গাছ, নিচে বসার জায়গা, আর ঝিকিমিকি করা জলের প্রতিবিম্ব—সব মিলে ছবির জন্য একেবারে উপযুক্ত পরিবেশ। চাইলে স্নানও করা যায় এই জলে। ড্যামের ধারে রয়েছে বাঁধানো সিঁড়ি, যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে একেবারে সিনেমার দৃশ্যের মতো ফ্রেম তৈরি হয়।

দূরে দেখা মেলে শুশুনিয়া পাহাড়ের

গাংদুয়ার সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ হয় শুশুনিয়ার উপস্থিতি। দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়টি যেন চোখের সামনে জীবন্ত ক্যানভাস। কবি বা শিল্পীদের কাছে এই দৃশ্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে বাধ্য। শুশুনিয়ার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ড্যামে নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। এখন একটি নৌকো সচল থাকলেও শীতকালের জন্য একাধিক নৌকা চালুর প্রস্তুতি চলছে, যা পর্যটকদের ভ্রমণকে আরও রঙিন করে তুলবে।

পর্যটকের অভিজ্ঞতায় খুশির রং

স্থানীয় পর্যটক পবন পাতর জানিয়েছেন, "এইখানে যতবার আসি ততবারই নতুন লাগে। প্রতিটি ঋতুতেই গাংদুয়ার আলাদা রূপ। আশেপাশে ছবি তোলার মতো অনেক জায়গা আছে, আছে একটি ব্রিজও। বন্ধুদের সঙ্গে এলে সময় কখন যে কেটে যায় বোঝাই যায় না।" তাঁর মতো আরও অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষের অভিজ্ঞতাই প্রমাণ করে, গাংদুয়া শুধু একটি ড্যাম নয়, বরং এক আবেগ।

কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার রাস্তা

যাঁরা ভাবছেন এত সুন্দর জায়গায় পৌঁছতে গেলে হয়তো অনেক সময় লাগবে, তাঁদের জন্য সুখবর—কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় গাংদুয়া ড্যামে। বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, গঙ্গাজলঘাটি ব্লক থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শালী নদীর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এই জলাধার। বাস, মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট গাড়ি—সব উপায়েই সহজে পৌঁছনো যায়।

প্রকৃতি ও নিস্তব্ধতার অনন্য মেলবন্ধন

আজকের ব্যস্ত জীবনে শান্তির খোঁজে মানুষ প্রকৃতির কাছে ছুটে যায়। গাংদুয়া সেই শান্তির অন্যতম আশ্রয়। এখানে নেই ভিড়, নেই শহুরে কোলাহল। আছে শুধু পাহাড়, নদী, বন আর জলাধারের মায়া। বন্ধুদের সঙ্গে হোক বা পরিবার নিয়ে, কয়েক ঘণ্টার ভ্রমণও মনকে তরতাজা করে তুলবে। আর সেই কারণেই গাংদুয়া ড্যাম ক্রমশ হয়ে উঠছে বাঁকুড়ার পর্যটন মানচিত্রের অন্যতম আকর্ষণ।

উপসংহার

বাঁকুড়ার গাংদুয়া জলাধার এখনও পর্যটনের মূলধারায় আসেনি। কিন্তু প্রকৃতির খোঁজে যারা ভিড় এড়িয়ে ভ্রমণ করতে চান, তাঁদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক ‘হিডেন জেম’। স্বল্প খরচে, অল্প সময়ে, অসাধারণ অভিজ্ঞতার জন্য গাংদুয়া হয়ে উঠতে পারে আপনার সামনের ছুটির সেরা গন্তব্য।

 

Leave a comment