উত্তর প্রদেশের বারাবাকি জেলা থেকে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা সামনে এসেছে। এখানে, এক বিটেক ছাত্র আত্মহত্যা করেছে, যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মৃত্যুর আগে, ছাত্রটি একটি ভিডিও বানিয়েছিল, যেখানে সে তার গার্লফ্রেন্ডের উপর প্রতারণা এবং পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ এনেছে।
মৃতের পরিচয় ২০ বছর বয়সী তুষার বর্মা হিসেবে জানা গেছে, যে মোহাম্মদপুর খালা থানা এলাকার জেভালি গ্রামের বাসিন্দা ছিল। তুষার বিটেক ছাত্র ছিল এবং শহরের লখপেড়াবাগ এলাকায় থেকে পড়াশোনা করছিল। মঙ্গলবার রাতে সে তার বাড়িতে এসেছিল এবং খাবার খেয়ে মা ও বোনের সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিল। গভীর রাতে, প্রায় তিনটে নাগাদ, সে মোবাইল ফোন থেকে ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রেকর্ড করে, যেখানে সে তার প্রেমিকা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে।
গার্লফ্রেন্ড নিয়েছে ৩ লক্ষ টাকা
ভিডিওতে তুষার জানায় যে তার গার্লফ্রেন্ড তার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছিল এবং পরে তাকে প্রতারণা করেছে। শুধু তাই নয়, সে আরও অভিযোগ করে যে মেয়েটির পরিবার তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভিডিও রেকর্ড করার পর তুষার বাড়ির উঠোনে মায়ের শাড়ি দিয়ে ফাঁস তৈরি করে আত্মহত্যা করে। বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যরা তার মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পরে। খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর তুষারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রেম থেকে বিবাদে গল্পের মোড়
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে যে তুষারের বন্ধুত্ব এক ইন্টারমিডিয়েটে পড়ুয়া ছাত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে ছিল। এই সময় তার মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাত্রীটি বারাবাঁকিতে তার ভাইয়ের সাথে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে, মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা তুষারের বিরুদ্ধে তাকে হয়রানি করার অভিযোগ করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ উভয় পক্ষকে ডেকে আপস মীমাংসা করে, যার পরে মেয়েটির বাবা তুষারের পরিবার থেকে লক্ষাধিক টাকা নেয়।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আপস মীমাংসা হলেও তাদের মানসিক নির্যাতন করা হতো। ঘটনার একদিন আগেও মেয়েটি ১১২ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকেছিল, যা তুষারকে আরও ভেঙে দেয়। এই মানসিক চাপেই সে আত্মঘাতী হয়।
পরিবারের গুরুতর অভিযোগ
তুষারের মায়ের বক্তব্য, তার ছেলেকে অকারণে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছিল এবং ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, মেয়ে এবং তার পরিবার ইচ্ছাকৃতভাবে মানসিক নির্যাতন করেছে, যার কারণে তুষার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
পরিবার এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পুলিশ তুষারের মোবাইল, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে, মেয়েটির পরিবার কত টাকা নিয়েছিল এবং কী ভিত্তিতে আপস হয়েছিল।
গ্রামে শোকের ছায়া
এই ঘটনার পর মৃতের গ্রাম জেভালিতে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মতে, তুষার পড়াশোনায় ভালো ছিল এবং ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল। তার এই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িত সমস্ত তথ্যের তদন্ত করা হচ্ছে। যদি অভিযোগগুলি সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।