বাজ পড়ে মৃত্যু রাজ্যে ১৮ জনের আকাশ ভেঙে পড়ল জনজীবনে

বাজ পড়ে মৃত্যু রাজ্যে ১৮ জনের আকাশ ভেঙে পড়ল জনজীবনে

বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা উপেক্ষা করে স্বাভাবিক জীবন চলছিল নিজের ছন্দে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর গড়াতেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। একাধিক জেলায় নেমে আসে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ভয়াবহ বজ্রপাত। আর সেই বজ্রপাতে প্রাণ গেল রাজ্যের অন্তত ১৮ জনের। আহত হয়েছেন আরও অন্তত সাত জন। বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর— এই তিন জেলায় বজ্রপাতে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। দিনের শেষে শোকস্তব্ধ গ্রামাঞ্চল, আতঙ্কে কাঁটা পরিবারগুলো।বজ্রপাতজনিত হঠাৎ বিপর্যয়ের প্রাথমিক সারাংশ ও রাজ্যজুড়ে প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।

বাঁকুড়ায় বজ্রপাত কেড়ে নিল ৯টি প্রাণ, কৃষিকাজের মাঝেই ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

বাঁকুড়ার কোতুলপুর, ওন্দা, ইন্দাস, জয়পুর ও পাত্রসায়ের থানা এলাকায় ভয়াবহ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। কোতুলপুরের খিরি গ্রামে আমন ধানের চারা রোপণের সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় জিয়াউল হক মোল্লার (৫০)। একই সঙ্গে গুরুতর জখম হন আসপিয়া মোল্লা। মাঠেই লুটিয়ে পড়েন দু’জন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে গোগড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জিয়াউলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওন্দা থানায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে নারায়ণ সাওয়ার (৫০)-এর। ইন্দাসের বাঙালচকে মারা যান শেখ ইসমাইল (৫৫)। জয়পুরে মারা যান উত্তম ভুঁইয়া (৩৩), পাত্রসায়েরে জীবন ঘোষ (২০)। আরও বেশ কয়েকজন—তিলকা মাল, জবা বাউরি, প্রতিমা রায়—বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান।বাঁকুড়ার বিভিন্ন থানায় বজ্রাঘাতে মৃতদের পরিচয়সহ ঘটনাগুলির মানবিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানে কৃষিক্ষেত্রে বাজ পড়ে নিহত ৮, মৃতদের অধিকাংশই কৃষক

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, আউসগ্রাম, রায়না, মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ, মাধবডিহি, ফতেপুর— সর্বত্র বজ্রপাতে মৃত্যু হয় কৃষিজীবী মানুষের। মাধবডিহির সনাতন পাত্র মাঠে কাজ করছিলেন, সেই সময় বাজ পড়ে মারা যান। ভেদিয়ার রবীন টুডু মামাবাড়ি এসেছিলেন, চাষের সময় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় তাঁরও। রায়নার তেণ্ডুল গ্রামের অভিজিৎ সাঁতরা, মঙ্গলকোটের বুড়ো মাড্ডি, মুইধারার পরিমল দাস, ফতেপুরের মদন বাগদি— প্রত্যেকেই চাষের জমিতে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শেখ নাসির ও তাঁর দুই ছেলে, আহত হন আলাউদ্দিন শেখ এবং টুম্পা দাসও।পূর্ব বর্ধমান জেলায় চাষাবাদের সময় বজ্রাঘাতে মৃত্যুর বিস্তারিত চিত্র ও গ্রামীণ জীবনের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও পুরুলিয়ায় বজ্রপাত কেড়ে নিল আরও প্রাণ

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার লাহিরগঞ্জ এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীকান্ত পানের (৪২)। ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের ভগবতীপুর গ্রামের কমল সরকার (৫৬) বজ্রাঘাতে মারা যান ধানের বীজ তোলার সময়। অন্য দিকে, পুরুলিয়ার ঝালদা থানার গুরিডি গ্রামে সুমিত্রা মাহাতো (৪৫) বজ্রপাতে প্রাণ হারান চাষের সময়ে। এই সমস্ত মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ একটাই—প্রাকৃতিক সতর্কতাকে অগ্রাহ্য করে খোলা মাঠে কাজ।অন্যান্য জেলাগুলির ঘটনাগুলিকে স্থান অনুযায়ী সাজিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বহুমাত্রিক প্রভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কীভাবে রক্ষা পাবেন বজ্রপাতের সময়? জেনে নিন জীবন বাঁচানোর কৌশল

বজ্রপাতের সময় ঘরের ভিতরে থাকা সবচেয়ে নিরাপদ। বিশেষ করে পাকা বাড়ির ভিতর আশ্রয় নেওয়া উচিত। কেউ যদি খোলা মাঠে থাকেন, আশ্রয় না পেলে মাটিতে শুয়ে পড়া যাবে না—বরং হাঁটু ভাঁজ করে নিচু হয়ে বসে পড়া নিরাপদ। বড় গাছের নিচে দাঁড়ানো বিপজ্জনক—কমপক্ষে ১৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি গাড়ির মধ্যে থাকেন, জানলা বন্ধ রাখুন। বৈদ্যুতিক তার বা জলাশয়ের কাছাকাছি যাবেন না। এই নিয়মগুলি মেনে চললে বজ্রপাতের সময় প্রাণরক্ষা করা সম্ভব।বজ্রপাতের সময় সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকতে পারেন তা সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

আকাশের রোষেই নিভে গেল ১৮ প্রাণ, এখন সময় সতর্কতার

একদিনে ১৮ জনের মৃত্যু শুধুই পরিসংখ্যান নয়, এটা রাজ্যের অন্তত ১৮টি পরিবারের শোকগাথা। যারা হারালেন স্বজন, হারালেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। কৃষিকাজ করতে গিয়ে, জীবনের রুটি জোগাড় করতে গিয়ে এমনভাবে প্রাণ হারানো নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক। এখন প্রশ্ন একটাই—বিপদ এড়াতে সাধারণ মানুষের কি আরও সচেতন হওয়া দরকার নয়? প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখন আসবে, তা আগাম বলা গেলেও বাঁচার উপায় শেখা প্রয়োজন—আজই।

Leave a comment