হাওড়ার অন্যতম প্রবেশদ্বার ও কলকাতা–জাতীয় সড়কের সংযোগকারী রুট — কোনা এক্সপ্রেসওয়ে আজ যেন যানজটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সকালে শুরু হয়ে রাত অবধি একটানা চলে গাড়ির জট। বাসে হোক বা প্রাইভেট গাড়িতে, যাত্রীরা যেন চলন্ত গাড়িতে স্থির সময়ের সাক্ষী। ‘এই অবস্থা আর কতদিন?’—এ প্রশ্ন এখন প্রায় প্রতিটি গাড়ির কাঁচ ঘেঁষে বসে থাকা যাত্রীর মুখে। এই রাস্তাতেই শহর ছাড়ে বন্দর থেকে বেরনো অসংখ্য লরি, ট্রাক, আবার দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই মূল রাস্তাই পরিণত হয়েছে এক বিশাল যানজটের মঞ্চে।রাস্তাটির গুরুত্ব ও যাত্রীদের নিত্যদিনের ভোগান্তি চিত্রায়িত হয়েছে এই অনুচ্ছেদে।

বন্দরের মালবাহী ট্রাক থেকে যাত্রীবাহী গাড়ি, সবকিছুর চাপ এক রাস্তাতেই
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে কেবল শহরের ভিতরের ট্র্যাফিক নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কের সংযোগরক্ষাকারী পথও বটে। খিদিরপুর বন্দরের ট্রাকগুলি এই পথ ধরেই পাড়ি দেয় দিল্লি রোড কিংবা বম্বে রোডের দিকে। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বহু মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ এটিই। সেইজন্যই সম্প্রতি একে ‘জাতীয় সড়ক’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তবু, যতই তকমা বদলাক না কেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সারি আজও বদলায়নি।জাতীয় স্তরে এই রাস্তাটির গুরুত্ব ও মালবাহী যানবাহনের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে, কিন্তু কাজের ফাঁকে হাঁপাচ্ছে শহর
রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে এই রাস্তায় চলছে বড়সড় পরিকাঠামোগত কাজ। তৈরি হচ্ছে এলিভেটেড করিডর, শুরু হয়েছে নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া। এই সব প্রকল্পের জন্য মাঝেমধ্যেই রাস্তায় আংশিক বা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে, যার ফলে আরও সরু হয়ে পড়ছে চলাচলের পথ। যানজটের দমন নয়, বরং এখন যেন সেটাই দৈনিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, বাস্তব চিত্র বলছে—এই কাজের ফলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের কাছে।উন্নয়নের নামেও কীভাবে রাস্তায় নেমে আসছে বাড়তি দুর্ভোগ, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বৃষ্টি মানেই দুঃস্বপ্ন, নিকাশির সমস্যায় অচল বিকল্প পথ
বর্ষাকালে সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সাঁতরাগাছি স্টেশন, গরফা ব্রিজ কিংবা সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে জল জমলেই মূল রাস্তাকে চাপ মুক্ত রাখার সমস্ত বিকল্প পথ হয়ে পড়ে অচল। তখন একটিই পথ — কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে সেখানেই ভিড় জমায় সমস্ত যানবাহন। অফিসযাত্রী থেকে রোগী কিংবা পরীক্ষার্থী — সকলেই এই যানজটে নিত্য বিপাকে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে এক ঘন্টার পথ পেরোতে সময় লেগে যাচ্ছে তিন ঘণ্টা। নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত দুর্বলতা গোটা শহরকে প্রতি বর্ষায় জবাবদিহি করাতে বাধ্য করছে।বর্ষাকালে জল জমে কেমন করে পুরো ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তা ফুটে উঠেছে।

পুলিশি প্রচেষ্টা থাকলেও যানবাহনের চাপে সবই ব্যর্থ প্রায়
যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের অধীনস্ত কোনা ট্র্যাফিক গার্ড, সাঁতরাগাছি ট্র্যাফিক গার্ড এবং বিদ্যাসাগর সেতু ট্র্যাফিক গার্ড প্রতিনিয়ত যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে বিশেষ কোনো সুফল মিলছে না। যানবাহনের সংখ্যাই এত বেশি যে পুলিশের কৌশলও কার্যকর হচ্ছে না বহু ক্ষেত্রে। যদিও মালবাহী গাড়ির জন্য পৃথক লেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই লেনেও গাড়ি ঢুকে পড়ছে। ফলে পুরো রাস্তায় এক ধরনের জ্যামড চক্র তৈরি হচ্ছে, যেটি খুলতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেন বাস্তব পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না, তার বিশ্লেষণ রয়েছে এখানে।

প্রতিদিনের বিভীষিকা কবে শেষ হবে? পথ চেয়ে আছে শহরবাসী
উন্নয়ন হোক বা প্রশাসনিক প্রচেষ্টা—সবকিছুর মাঝেও প্রশ্ন একটাই থেকে যাচ্ছে, ‘এই যানজট কবে শেষ হবে?’ শহরবাসীর ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে প্রতিদিনের এই অসহনীয় যন্ত্রণায়। যতদিন না বিকল্প করিডর চালু হয় বা কার্যকর প্ল্যান হাতে নেওয়া হয়, ততদিন কোনা এক্সপ্রেসওয়ে শুধুই একটি রোড নয়, এটি থেকে যাবে এক অন্তহীন ক্লান্তির যাত্রাপথ।












