বেসনের লাড্ডু একটি সুস্বাদু এবং ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় মিষ্টি। এটিতে বেসন, গমের আটা, বুরা, ঘি এবং শুকনো ফল ব্যবহার করা হয়। বেসনকে কম আঁচে ভেজে ঘি ও এলাচ মেশানো হয়। ঠান্ডা হয়ে গেলে বুরা মিশিয়ে লাড্ডু তৈরি করা হয়। পেস্তা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। এটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু।
Sweet Racipee: ভারতীয় মিষ্টির মধ্যে যদি কোনো একটি মিষ্টি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করা হয়, তবে তা হল – বেসনের লাড্ডু। এই মিষ্টি প্রতিটি বিশেষ উপলক্ষ, উৎসব বা পূজা-পার্বণে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। দেশি ঘিয়ে তৈরি এই লাড্ডু শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ভরপুর। আজ আমরা আপনাদের জানাবো একটি বিশেষ এবং ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে বেসনের লাড্ডু তৈরির রেসিপি, যেখানে স্বাদ, সুগন্ধ এবং পুষ্টির এক अद्भुत संगम রয়েছে।
উপকরণ (প্রায় 32টি মাঝারি লাড্ডুর জন্য)
- বেসন – 500 গ্রাম
- গমের আটা – 100 গ্রাম
- বুরা (গুঁড়ো চিনি) – 600 গ্রাম
- দেশি ঘি – 350 গ্রাম
- এলাচ গুঁড়ো – 2 টেবিল চামচ (বা স্বাদ অনুযায়ী)
- কাজু, বাদাম – মিহি করে কাটা (স্বাদ অনুযায়ী)
- পেস্তা – সাজানোর জন্য (কুচি করে কাটা)
বেসনের লাড্ডু তৈরির ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি
1. উপকরণের প্রস্তুতি
প্রথমে সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে করে নিন। কাজু, বাদাম মিহি করে কেটে নিন এবং পেস্তা সাজানোর জন্য আলাদা করে রাখুন। এতে পরে কাজ সহজ হবে এবং সময়ও বাঁচবে।
2. আটা ও বেসন ভাজা – আসল স্বাদের রহস্য
বেসনের লাড্ডুর আসল স্বাদ এবং সুগন্ধ নির্ভর করে আপনি বেসন এবং আটাকে কতটা ভালোভাবে এবং সঠিক তাপমাত্রায় ভাজছেন। এই পর্যায়ে একটু সময় এবং মনোযোগ প্রয়োজন, তবে এই পদক্ষেপটিই লাড্ডুর গুণমান নির্ধারণ করে।
- প্রথমে একটি ভারী তলার কড়াই নিন এবং তাতে গমের আটা (100 গ্রাম) দিন। ঘি ছাড়া, কম থেকে মাঝারি আঁচে ক্রমাগত নাড়াচাড়া করে এটিকে ভাজুন। কিছুক্ষণ পর আটার রং হালকা সোনালী হয়ে যাবে এবং তা থেকে হালকা মিষ্টি গন্ধ আসতে শুরু করবে। এবার এটি একটি থালায় তুলে আলাদা করে রাখুন।
- ওই কড়াইতে এবার 500 গ্রাম বেসন দিন এবং এটিকেও শুকনো করে কম আঁচে ভাজতে শুরু করুন। খেয়াল রাখবেন যেন বেসন পুড়ে না যায়, তাই এটিকে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। যখন বেসন সামান্য রং বদলাতে শুরু করবে এবং তা থেকে সুগন্ধ বের হতে শুরু করবে, তখন এতে প্রায় 250 গ্রাম ঘি মেশান।
- ঘি দেওয়ার পর বেসন কিছুক্ষণ পর নরম ও মসৃণ হয়ে যাবে। এখন এই মিশ্রণটিকে কম আঁচে ততক্ষণ ভাজতে থাকুন যতক্ষণ না এর রং সোনালী বাদামী হয়ে যায় এবং এটি প্যানের গা থেকে ছেড়ে না আসে। এই সময় রান্নাঘরে একটি সুখকর এবং ঘন সুবাস ছড়িয়ে পড়বে, যা জানান দেয় যে বেসন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
3. मेवा ও এলাচের সংযোগ
যখন বেসন ভালোভাবে ভাজা হয়ে যাবে, তখন তাতে কাটা কাজু ও বাদাম দিন। সাথে এলাচ গুঁড়োও দিন যাতে লাড্ডুতে সুগন্ধ ও স্বাদ দুটোই ভরপুর হয়। এবার বাকি ঘি টুকুও মিশ্রণে দিয়ে কিছুক্ষন ভাজুন যাতে মেওয়াগুলোও সামান্য ভাজা হয়ে যায়।
4. ঠান্ডা করা এবং বুরা মেশানো
এবার গ্যাস বন্ধ করুন এবং বেসনের এই মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। খেয়াল রাখবেন মিশ্রণটি যেন পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে যায়, তবেই পরবর্তী ধাপটি করবেন। যখন মিশ্রণ ঠান্ডা হয়ে যাবে, তখন এতে ছাঁকা বুরা মেশান এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই সময় আপনি চাইলে মিশ্রণের একটি ছোট গোলা তৈরি করে স্বাদ চেখে দেখতে পারেন।
5. লাড্ডু তৈরি ও সাজানো
এবার আপনার হাতে সামান্য ঘি লাগান এবং মিশ্রণ থেকে ছোট বা মাঝারি আকারের লাড্ডু তৈরি করা শুরু করুন। এই মিশ্রণটি প্রায় 32টি মাঝারি আকারের লাড্ডু তৈরির জন্য যথেষ্ট। প্রতিটি লাড্ডুকে উপরে পেস্তার কুচি দিয়ে সাজান। আপনি চাইলে রূপালী তবকও ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু ঐতিহ্যবাহী স্বাদে পেস্তার কুচি বেশি উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।
বেসনের লাড্ডু: স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুটোই
বেসনের লাড্ডু শুধু স্বাদেই সেরা নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। বেসন প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, অন্যদিকে দেশি ঘি শরীরের শক্তি বাড়ায়। শীতকালে এই মিষ্টি শরীরকে গরম রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত, এই মিষ্টি সব বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত।
টিপস এবং পরামর্শ
- যদি আপনি লাড্ডুগুলিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চান তবে এগুলিকে এয়ার টাইট বাক্সে ভরে ঠান্ডা জায়গায় রাখুন।
- এলাচের পরিবর্তে আপনি জায়ফল গুঁড়ো বা দারুচিনিও স্বাদ অনুসারে দিতে পারেন।
- সুগার ফ্রি বিকল্পের জন্য বুড়ার পরিবর্তে নারকেল চিনি বা ডেট পাউডার ব্যবহার করুন।
বেসনের লাড্ডু তৈরি করা একটি শিল্প, যা একটু অনুশীলন এবং সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে যে কেউ শিখতে পারে। যখন আপনি এটি বাড়িতে তৈরি করবেন, তখন বাজার থেকে কেনা লাড্ডুর তুলনায় স্বাদ, গুণমান এবং ভালোবাসা তিনগুণ বেশি পাবেন। তাই এই উৎসব বা বিশেষ অনুষ্ঠানে ঘরে তৈরি এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দিয়ে সবার মন জয় করুন।