বিজেপি বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর জন্য ৭১ জন প্রার্থীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে। রামকৃপাল যাদব দানাপুর থেকে এবং সম্রাট চৌধুরী তারাপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তালিকায় তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য দেখা গেছে।
পাটনা। বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ৭১ জন প্রার্থীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা প্রথম দফার নির্বাচনের (First Phase Election) জন্য। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দল সামাজিক সমীকরণ (Social Equation), স্থানীয় জনসমর্থন এবং জয়ের সম্ভাবনাকে (Winning Probability) অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিজেপির লক্ষ্য হল প্রথম দফায় সর্বোচ্চ আসন জিতে নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা।
বিজেপি দেখাল প্রাথমিক দৃঢ়তার কৌশল
সূত্র অনুযায়ী, বিজেপি এবার প্রথম দফা থেকেই একটি আক্রমণাত্মক কৌশল (Aggressive Strategy) অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দল প্রার্থীদের নাম আগেভাগে ঘোষণা করে সংগঠনকে প্রচারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিজেপির লক্ষ্য হল এই দফায় এনডিএ (NDA)-এর মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সকে সবচেয়ে শক্তিশালী করা, যাতে পরবর্তী দফায় জনসমর্থন আরও বাড়ানো যায়।
দানাপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রামকৃপাল যাদব
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামকৃপাল যাদবকে দানাপুর আসন থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী তারাপুর থেকে নির্বাচন লড়বেন। মঙ্গল পাণ্ডে সিওয়ান থেকে প্রার্থী হয়েছেন। দল রেণু দেবীকে বেতিয়া এবং শ্রেয়সী সিংকে জামুই থেকে টিকিট দিয়েছে। এই সব নাম দলের অভিজ্ঞতা এবং জনপ্রিয়তা উভয়ই প্রতিফলিত করে।
প্রথম তালিকায় ভারসাম্য
বিজেপির প্রথম তালিকায় তরুণ মুখ এবং অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য স্পষ্ট। দল যেখানে বর্তমান বিধায়কদের উপর আস্থা রেখেছে, সেখানে কিছু আসনে নতুন মুখদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই কৌশলের উদ্দেশ্য হল সংগঠনে শক্তি ও সজীবতা আনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই তালিকা সামাজিক ও আঞ্চলিক সমীকরণ মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ না থাকে।
প্রধান আসনগুলিতে বিজেপির প্রার্থীরা
বিজেপির তালিকায় বেশ কয়েকটি প্রধান আসনে পরিচিত নাম উঠে এসেছে।
- দানাপুর থেকে রামকৃপাল যাদব
- তারাপুর থেকে সম্রাট চৌধুরী
- সিওয়ান থেকে মঙ্গল পাণ্ডে
- আরা থেকে সঞ্জয় সিং
- পরিহার থেকে গায়ত্রী দেবী
- বেতিয়া থেকে রেণু দেবী
- জামুই থেকে শ্রেয়সী সিং
- রক্সৌল থেকে প্রমোদ কুমার
- সীতামঢ়ী থেকে সুনীল কুমার পিন্টু
- লখিসরাই থেকে বিজয় কুমার সিনহা
এছাড়াও, রিগা থেকে বৈদ্যনাথ, মধুৱন থেকে রানা রণধীর, বথনাহা থেকে অনিল কুমার, বেনিপট্টি থেকে বিনোদ নারায়ণ ঝা, এবং আরওয়াল থেকে মনোজ শর্মা টিকিট পেয়েছেন।
মহিলাদেরও মিলেছে সম্মানজনক প্রতিনিধিত্ব
এই তালিকায় বিজেপি মহিলাদের অংশগ্রহণকে (Women Representation) গুরুত্ব দিয়েছে। গায়ত্রী দেবী, রেণু দেবী, নিশা সিং এবং সুইটি সিং-এর মতো মহিলা প্রার্থীদের টিকিট দিয়ে দল নারী ক্ষমতায়নের (Women Empowerment) তার বার্তা আবারও दोहराল।
রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সম্রাট চৌধুরী নিজে নির্বাচনী ময়দানে নামছেন, যা দলের কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। চৌধুরী বলেছেন যে দলের এই তালিকা সমস্ত সামাজিক বর্গের প্রতিনিধিত্বের প্রতীক এবং এটি বিহারে সুশাসন (Good Governance) ও উন্নয়নের (Development) জন্য জনগণের বিশ্বাস জয়ের একটি রোডম্যাপ।
অভিজ্ঞতা ও নতুন মুখের মিশ্রণ
বিজেপির তালিকায় অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি অনেক তরুণ মুখও রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য কাজ করছেন। দলের বিশ্বাস যে তরুণদের অংশগ্রহণে নির্বাচনী প্রচারে নতুন শক্তি আসবে। অন্যদিকে, প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতা সংগঠনকে স্থিতিশীলতা দেবে।
সামাজিক সমীকরণের উপর মনোযোগ
বিজেপি এবার জাতিগত ও আঞ্চলিক সমীকরণ বজায় রাখার উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। উত্তর বিহার থেকে দক্ষিণ বিহার পর্যন্ত, সমস্ত অঞ্চলকে সুষম প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া শ্রেণী (OBC), তফসিলি জাতি (SC) এবং উচ্চ বর্ণের নেতাদের টিকিট দিয়ে দল সমস্ত শ্রেণীকে একসঙ্গে আনার বার্তা দিয়েছে।
প্রথম দফায় জয়ের উপর জোর
বিজেপি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, প্রথম দফার ৭১টি আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করে দল বিহারে ক্ষমতার দাবিকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। দলের বক্তব্য, এনডিএ (NDA)-এর মধ্যে আসন বণ্টনের সমন্বয়ের পর এই তালিকা সংগঠনের সম্মিলিত সম্মতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রচার কৌশল এবং ডিজিটাল ক্যাম্পেইন
সূত্র অনুযায়ী, বিজেপি নির্বাচন প্রচারের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করেছে। দল এবার মাঠ পর্যায়ের প্রচারের (Ground Campaign) পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমগুলিও (Digital Platforms) ব্যবহার করবে। সোশ্যাল মিডিয়া, জনসভা এবং 'ঘরে ঘরে যোগাযোগ' অভিযানের মাধ্যমে বিজেপি ভোটারদের কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে।
স্থানীয় ইস্যুগুলির উপর ফোকাস
বিজেপির রণনীতিতে স্থানীয় ইস্যুগুলিকেও (Local Issues) অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে প্রার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা রাস্তা, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার মতো জনসম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেবেন। দলের বিশ্বাস যে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং মোদী সরকারের নীতিগুলির সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে নির্বাচনী সমর্থন বাড়ানো যেতে পারে।