নির্বাচনের মরশুমে নতুন দল গঠন হওয়া নতুন কিছু নয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজ পাটনায় একটি নতুন দল, বিকাশ বঞ্চিত ইনসান পার্টি (VVIP), আত্মপ্রকাশ করল।
বিহার নির্বাচন 2025: বিহার বিধানসভা নির্বাচন 2025 যত এগিয়ে আসছে, রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে এবং ভাঙছে। এরই মধ্যে, শনিবার পাটনায় একটি নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দলটির নাম হল বিকাশ বঞ্চিত ইনসান পার্টি (VVIP)। এই নতুন দলটি তৈরি করেছেন প্রদীপ নিষাদ, যিনি নিজেকে মাল্লা সমাজের শক্তিশালী মুখ হিসেবে পরিচয় দেন এবং উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা।
VVIP-এর গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই মনে করা হচ্ছে যে বিহারে আগে থেকেই সক্রিয় বিকাশশীল ইনসান পার্টি (VIP) এবং তার প্রধান মুকেশ সাহানির সমস্যা বাড়তে পারে। VIP অর্থাৎ বিকাশশীল ইনসান পার্টি গত নির্বাচনে মহাজোটের অংশ হয়ে মাল্লা সমাজে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছিল, কিন্তু এখন সেই সমাজ থেকেই উঠে আসা VVIP তাদের ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে চাইছে।
প্রদীপ নিষাদের কৌশল
প্রদীপ নিষাদ একসময় মুকেশ সাহানির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 2022 সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে দু’জনকে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু সেখানে একটি বিতর্কের জেরে তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে। এরপর প্রদীপ নিষাদ নিজের রাজনৈতিক পথ আলাদা করে নেন। এখন তিনি বিহারে VVIP পার্টির মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছেন।
প্রদীপ নিষাদ এবিপি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছেন, মুকেশ সাহানির দলের নাম বিকাশশীল ইনসান পার্টি, যার অর্থ হল ‘বিকাশ হয়ে গেছে’, কিন্তু তাঁর দল বিকাশ বঞ্চিত ইনসান পার্টি, যার উদ্দেশ্য হল সেইসব মানুষের কথা শোনা, যারা এখনও উন্নয়নের আলো থেকে বঞ্চিত। তাঁর দাবি, তিনি মাল্লা সমাজের সব উপজাতিকে একত্রিত করবেন এবং তাঁদের সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন।
মুকেশ সাহানির কৌশলের উপর প্রভাব
মুকেশ সাহানি বিহারে ‘সন অফ মাল্লা’ (মাল্লাদের ছেলে) হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছেন এবং মাল্লা সমাজের মধ্যে সংরক্ষণের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরছেন। গত নির্বাচনে তিনি যেভাবে মহাজোটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসন জিতেছিলেন, তা তাঁকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। কিন্তু এখন প্রদীপ নিষাদের VVIP-এর ময়দানে নামার ফলে মাল্লা ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি VVIP মাল্লা সমাজে সামান্যতম প্রভাবও বিস্তার করতে পারে, তাহলে VIP-এর ক্ষতি হবে এবং মহাজোটের নির্বাচনী অঙ্কও প্রভাবিত হতে পারে।
পুরোনো কথা ভুলে গেছি - প্রদীপ নিষাদ
যদিও রাজনৈতিক মহলে এটিকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের চেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে, তবে প্রদীপ নিষাদ তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এসব পুরনো কথা, আমি সেগুলো মনে রাখতে চাই না। আমার উদ্দেশ্য শুধু নিজের দলকে শক্তিশালী করা এবং উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করা।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন তিনি জনগণের মধ্যে গিয়ে তাঁর আদর্শ এবং নীতি নিয়ে সমর্থন আদায় করবেন।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে VVIP-এর প্রবেশ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এবার লড়াই বহু-কোণযুক্ত হবে। মাল্লা সমাজের প্রায় 4 শতাংশ ভোট নিজেদের দিকে টানার দৌড়ে এখন দুই মুখ – একদিকে মুকেশ সাহানি, অন্যদিকে প্রদীপ নিষাদ। মুকেশ সাহানির দল এখনও পর্যন্ত এই নতুন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে যে তাঁরা দ্রুত তাঁদের কৌশল পরিবর্তন করতে পারেন।
