বিহারের ভোটার তালিকা যাচাইকরণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর, সুপ্রিম কোর্টে মামলা

বিহারের ভোটার তালিকা যাচাইকরণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর, সুপ্রিম কোর্টে মামলা

বিহার-এ ভোটার তালিকা যাচাইকরণ নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে জারি করা বিশেষ গভীর পুনরীক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলি সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেছে। বুধবার, মহাজোট রাজ্যজুড়ে চাকা বন্ধ এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং পাপ্পু যাদব-কে রাস্তায় দেখা যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়াটি দ্রুততার সঙ্গে এবং পক্ষপাতদুষ্টভাবে করা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য হল বিশেষ কিছু সম্প্রদায়কে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।

রাহুল গান্ধী পাটনায় ইনকাম ট্যাক্স গোলম্বর থেকে শহীদ স্মারক হয়ে নির্বাচন কমিশনের অফিস পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। অন্যদিকে, সাংসদ পাপ্পু যাদব পূর্ণিয়ায় রেল অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। বিরোধী দল এই প্রক্রিয়াটিকে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করছে।

কমিশন সময়সীমা জারি করেছে

নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর পুনরীক্ষণের নির্দেশ জারি করে। এই প্রক্রিয়ার অধীনে রাজ্যের ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৮৪৪ জন ভোটারের মধ্যে ৯৭.৪২% অর্থাৎ ৭ কোটি ৬৯ লক্ষ ভোটারের কাছে ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কমিশন দাবি করেছে যে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে যাচাইকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

এর পরে ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। যারা নথি জমা দিয়েছেন, তাদের নাম ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করার ঘোষণা করেছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, মৃত, ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন বা রাজ্য ছেড়ে গিয়েছেন এমন ভোটারদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। কমিশন আরও জানিয়েছে যে, স্থানীয় স্তরে যাচাইকরণের ভিত্তিতে নতুন ভোটারদের নাম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে, যাতে কোনো যোগ্য ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ না যায়।

মহাজোটের অভিযোগ, পক্ষপাতদুষ্টতা

বিরোধী মহাজোট এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন যে, বর্ষাকালে বন্যা ও বৃষ্টির মধ্যে ২৫ দিনের মধ্যে ৮ কোটি ভোটারের যাচাইকরণ করা অবাস্তব। তিনি যাচাইকরণের জন্য আধার কার্ডের পাশাপাশি জব কার্ড এবং মনরেগা কার্ডের মতো বিকল্প নথিগুলির স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তেজস্বী যাদব আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, যেখানে রাজ্যের প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ রুজি-রোজগারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গিয়েছেন এবং তাদের ফিরে এসে যাচাইকরণের জন্য কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।

মহাজোট এই প্রক্রিয়াটিকে 'গোপনে এনআরসি (NRC) প্রয়োগের ষড়যন্ত্র' বলে অভিহিত করেছে। বিরোধীদের মতে, এই সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা একটি বিশেষ সম্প্রদায় এবং শ্রেণীকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এনডিএ সরকারের চাপে কাজ করার অভিযোগ করেছে এবং যাচাইকরণ সংক্রান্ত তথ্য প্রতিদিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।

আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, সিপিআই-এমএল, ভিআইপি, এআইএমআইএম এবং পাপ্পু যাদব এই চাকা বন্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। জন সুরাজ-এর নেতা প্রশান্ত কিশোরও এই প্রক্রিয়াটিকে ‘ভোটবন্দী’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য

নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনেই হচ্ছে। কমিশন স্পষ্ট করেছে যে তারা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। কমিশনের দাবি, ব্যাপকহারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই করা হয়েছে এবং ভোটারদের তথ্যে পরিবর্তন হলে তা আপডেট করা হচ্ছে।

তবে, বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের জবাবে সন্তুষ্ট নয় এবং এই ইস্যুতে তারা ইতিমধ্যে কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছে। বর্তমানে এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে, যেখানে ১০ জুলাই শুনানি হবে। এরই মধ্যে, মহাজোট রাস্তায় নেমে রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল জোরদার করেছে।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ

এই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিবৃতিও তুঙ্গে উঠেছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন যে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি গরিব ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। অন্যদিকে, উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছেন যে, অকারণ হৈচৈ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। জেডিইউ মুখপাত্র রাজীব রঞ্জনও বিরোধীদের একহাত নিয়ে এই পুরো প্রতিবাদকে একটি ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

রাজ্যের রাজধানী পাটনা থেকে পূর্ণিয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তাকে কংগ্রেস তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করার একটি উপায় হিসেবে দেখছে, যেখানে তেজস্বী এবং পাপ্পু যাদব বিরোধী ঐক্যের বার্তা দিতে ব্যস্ত। এনডিএ এই পুরো প্রতিবাদকে বিরোধীদের 'রাজনৈতিক স্টান্ট' হিসেবে অভিহিত করেছে।

 

Leave a comment