ইন্দোরের বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ইনানি হরিদ্বার যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রেনে একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ এবং মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। দেবেন্দ্র ইনানি তাঁর প্রয়াত মা এবং অন্য তিন আত্মীয়ের অস্থি নিয়ে ২০ জুলাই রাতে ঋষিকেশ এক্সপ্রেস-এ হরিদ্বারের দিকে রওনা হয়েছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নয় জন সদস্যের সাথে যাত্রা করছিলেন এবং ইন্দোরের লক্ষ্মীবাঈ নগর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন।
সকাল প্রায় ৪টার দিকে, যখন ট্রেন মুরোনা এবং আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মধ্যে ছিল, তখন এক যুবক এস-৪ কোচ থেকে চুপিসারে এস-২ কোচে প্রবেশ করে এবং অস্থি ভর্তি ব্যাগটি তুলে নিয়ে নীরবে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইনানির ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি যুবককে ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
যাত্রীদের সতর্কতা
বিজেপি নেতা চিৎকার করলে অন্য যাত্রীরাও তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সবাই মিলে অভিযুক্তকে ধরে ফেলে এবং তাকে মারধর করে। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জানায় যে সে অস্থি কলস চুরি করার চেষ্টা করছিল, যা যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ট্রেনটি আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত যুবককে রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনার খবর পেয়েই জিআরপি বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ অভিযুক্তের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে এবং তার আগের অপরাধের রেকর্ড খতিয়ে দেখছে। জানা গেছে, অভিযুক্ত গোয়ালিয়রের বাসিন্দা।
শৌচাগার থেকে দুটি খালি পার্স উদ্ধার
ট্রেনে ঘটা এই ঘটনা যাত্রীদের হতবাক করে দিয়েছে। অভিযুক্তের তল্লাশি চালানোর সময় ট্রেনের শৌচাগার থেকে দুটি খালি পার্সও উদ্ধার করা হয়। এ সময় অন্য এক যাত্রী জানান, তার মোবাইল ফোনও চুরি করে ট্রেন থেকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে অভিযুক্ত একজন পেশাদার চোর এবং এর আগেও যাত্রীদের নিশানা করেছে।
বিজেপি নেতা জানান, চুরি হওয়া ব্যাগটি খুবই বিশেষ ছিল, কারণ তাতে তাঁর মা ও অন্য তিন আত্মীয়ের অস্থি ছিল, যা তিনি গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনা তাঁর জন্য মানসিকভাবে খুবই বেদনাদায়ক ছিল।
পুলিশ তদন্তে নেমেছে
ঘটনার পর সব যাত্রী তাদের যাত্রা আবার শুরু করেছেন, তবে যে যাত্রীর মোবাইল চুরি হয়েছিল, তিনি আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নেমে জিআরপি-তে রিপোর্ট দায়ের করতে গিয়েছেন। পুলিশ অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে যে সে একা কাজ করছিল নাকি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত।
রেলওয়ে পুলিশের বক্তব্য, এ ধরনের ঘটনা গুরুতর এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
যাত্রীদের সতর্কতায় বড় বিপদ এড়ানো গেল
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিল যে যাত্রীদের সতর্কতা বড় ঘটনা এড়াতে পারে। চলন্ত ট্রেনে চুরির চেষ্টা কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রশ্ন তোলে না, বরং এও দেখায় যে ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের ওপর নজর রাখা কতটা জরুরি। সৌভাগ্যবশত সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়ায় অস্থি ভর্তি ব্যাগটি উদ্ধার করা গেছে এবং অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
রেল প্রশাসন এবং জিআরপি এখন এই পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।