দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, শিকড়ের টান আর ইতিহাসের সাক্ষাৎকার। শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে গিয়ে অনেকেই খুঁজে নেন বনেদি বাড়ির ঐতিহ্য। তেমনই এক অসাধারণ গন্তব্য হলো পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল দে বাড়ি।
পুজোর ঐতিহ্য আর বিশেষত্ব
বড়শুল দে বাড়ির দুর্গাপুজো ইতিহাসে সমৃদ্ধ। একসময় কামানের আওয়াজে বলিদান দেওয়া হতো এখানে। আজও দশমীতে বিশেষ আচার চলে—কাহারদের কাঁধে চড়ে কৈলাসে পাড়ি দেন হরগৌরী। এই বিশেষ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ।
দেবীর রূপে বৈচিত্র্য
অন্য বনেদি বাড়ির থেকে আলাদা করে তুলেছে এই পুজোর দেবীর রূপ। মহিষাসুরবধ নয়, এখানে দুর্গা মহাদেবের বাম ঊরুতে আসীন হরগৌরী। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর বাহন নেই, দেবী দ্বিভূজা রূপে পূজিত হন। এই রীতির পেছনে রয়েছে নানান লোককথা ও পরিবারের কাহিনি।
মিদারির আভিজাত্যজ
এই পরিবার একসময় তাম্বুল ও লবণের ব্যবসায় সমৃদ্ধ ছিল। দামোদর নদ ঘিরে ব্যবসা বিস্তৃত হয়েছিল। আজও বিশাল অট্টালিকা, ঝুল বারান্দা আর খসে পড়া পলেস্তরায় লুকিয়ে আছে জমিদারির আভিজাত্য। যদিও অনেক ঘর আজ ফাঁকা পড়ে, তবু পুজোর সময় পরিবারের সদস্যরা ফিরে আসেন।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
বর্ধমান থেকে বাস বা টোটো করে সহজেই পৌঁছানো যায় বড়শুলে। কলকাতা থেকে গেলে নামতে হবে শক্তিগড়ে, সেখান থেকেও টোটো ধরে যাওয়া যায় দে বাড়িতে। সারাদিন ভ্রমণ সেরে ফিরতে পারেন, আবার কাছাকাছি হোটেলে থেকেও উপভোগ করতে পারেন বনেদি বাড়ির উৎসবের আবহ।
পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল দে বাড়ির বনেদি দুর্গাপুজো শুধুই উৎসব নয়, এটি ঐতিহ্য ও ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। হরগৌরী রূপের দেবী দর্শন, জমিদার বাড়ির মহিমা আর শিকড়ের টান—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই পুজোয় যদি আপনি ভিন্ন স্বাদ খুঁজে থাকেন, তবে অবশ্যই একবার ঘুরে আসতে পারেন বড়শুল দে বাড়ি থেকে।