বর্ষাকালের মনোরম আবহাওয়া যেমন উপভোগ্য, তেমনই আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য কিছু সমস্যা নিয়ে আসে। বিশেষ করে চুল পড়া, এই সময়ে একটি সাধারণ এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এই সময়ে চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন। আজকাল ১৬-১৭ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরাও এই সমস্যায় ভুগছে। তবে, আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে বর্ষাকালে চুল কেন পড়ে? এবং এর সমাধান কী হতে পারে, তাও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই?
বর্ষাকালে চুল পড়ার কারণ: আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ
চরক সংহিতা অনুসারে, বর্ষাকালে শরীরের পিত্ত দোষের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। এই ভারসাম্যহীনতা জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়। পিত্তের বৃদ্ধিতে শরীরে গরমভাব বাড়ে, যা চুলের গোড়া দুর্বল করে, মাথার ত্বকে শুষ্কতা আনে এবং চুল ভাঙতে ও সাদা হতে শুরু করে। এই কারণেই বর্ষাকালে চুল পড়ার হার বেড়ে যায় এবং অনেক সময় হঠাৎ করে অনেক বেশি চুল পড়তে থাকে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শ্যাম্পু বা তেল ব্যবহার করলেই হবে না, শরীরের অভ্যন্তর থেকে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা জরুরি।
মিষ্টি ও দুগ্ধজাত খাবার বর্জন করুন
চরক সংহিতা বলে যে মিষ্টি জিনিস এবং দুগ্ধজাত খাবার (যেমন দুধ, পনির, দই ইত্যাদি) পিত্তকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বর্ষাকালে এই খাবারগুলো হজম করা কঠিন হয় এবং ত্বক ও চুলের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
করণীয়:
- চিনির পরিবর্তে গুড় বা মধুর সীমিত ব্যবহার করুন।
- দুগ্ধজাত খাবারের পরিবর্তে নারকেল দুধ বা বাদাম দুধ ব্যবহার করুন।
- দইয়ের বদলে দিনের বেলায় छाছ খান।
আমিষ খাবার থেকে দূরে থাকুন
পৌরাণিক ও বৈজ্ঞানিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে, শ্রাবণ মাসে আমিষ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারেও, এটি পিত্তকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে, যার ফলে চুল পড়তে শুরু করে।
করণীয়:
- প্রোটিনের জন্য ডাল, ছোলা, রাজমা, সয়াবিন এবং অঙ্কুরিত শস্য খান।
- সপ্তাহে অন্তত একবার মুগের খিচুড়ি খান, যা শরীরকে শান্ত করে।
রোদ থেকে বাঁচুন এবং জল গ্রহণ বাড়ান
প্রখর রোদ শরীরের অভ্যন্তরীণ গরমভাব বাড়িয়ে তোলে। বর্ষাকালের মেঘ রোদকে কমিয়ে দিলেও, আর্দ্রতার কারণে শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।
করণীয়:
- রোদে বের হওয়ার আগে মাথা কাপড় বা ছাতা দিয়ে ঢেকে নিন।
- দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার জল পান করুন।
- ডাবের জল, বেল শরবত এবং লেবুর জল দিয়ে শরীরকে সতেজ রাখুন।
চিয়া বীজের অসাধারণ ব্যবহার
আয়ুর্বেদে চিয়া বীজকে শক্তির ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শরীরের গরমভাব কমায়, ত্বক ও চুলের মেরামত করে এবং হজমক্ষমতা উন্নত করে।
ব্যবহারের নিয়ম:
- রাত্রে এক গ্লাস জলে এক চামচ চিয়া বীজ ভিজিয়ে রাখুন।
- পরদিন সকালে খালি পেটে এটি খান।
- ইচ্ছা করলে এতে সামান্য মধু ও লেবু মেশাতে পারেন।
গond katira: চুলের গোড়ায় শীতলতা
গond katira-কে আয়ুর্বেদে চুলের জন্য শীতলতা প্রদানকারী অমৃত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি হজমক্ষমতা উন্নত করে, শরীরের গরমভাব কমায় এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
ব্যবহারের নিয়ম:
- রাত্রে এক গ্লাস জলে এক চামচ gond katira ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে এতে সামান্য মধু বা গোলাপ জল মিশিয়ে খান।
- সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ বার এটি ব্যবহার করুন।
বর্ষাকালে চুলের যত্ন কিভাবে নেবেন?
- সপ্তাহে ২-৩ বার ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- আমলকী, ভৃঙ্গরাজ এবং নিম তেল চুলের গোড়ায় লাগান।
- হেয়ার মাস্কে দই এবং মেথির পেস্ট ব্যবহার করুন।
- বৃষ্টির জল থেকে চুল বাঁচান।
- ভেজা চুলে চিরুনি ব্যবহার করবেন না।
যদি আপনি সত্যিই চান যে বর্ষাকালে চুল পড়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাক এবং চুলের বৃদ্ধি এত হোক যে চিরুনিতে জট পাকিয়ে যায়, তাহলে চরক সংহিতার এই ৫টি কথা মেনে চলুন। এতে শুধু আপনার চুল মজবুত ও ঘন হবে না, আপনার ত্বকও উজ্জ্বল হবে এবং শরীরের গরমভাবও শান্ত হবে।