ভারতে শৈশবের স্থূলতা দ্রুত বাড়ছে, যার কারণ পরিবর্তিত জীবনধারা, জাঙ্ক ফুড, কম শারীরিক কার্যকলাপ এবং আধুনিক অভিভাবকত্বের অভ্যাস। এটি কেবল শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
Childhood obesity in India: জাতীয় শিশু স্থূলতা সচেতনতা মাস উপলক্ষে ফোর্টিস হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. বিবেক জৈন জানিয়েছেন যে ভারতে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার ঘটনা বাড়ছে। পরিবর্তিত জীবনধারা, জাঙ্ক ফুডের ক্রমবর্ধমান সেবন, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং আধুনিক অভিভাবকত্ব এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলছে। সময়মতো সুষম খাদ্য, প্রতিদিন ব্যায়াম, স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শৈশবের স্থূলতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
পরিবর্তিত জীবনধারার প্রভাব
আজকের শিশুরা মোবাইল, টিভি এবং কম্পিউটারে বেশি সময় ব্যয় করে। এর ফলে তাদের শারীরিক কার্যকলাপ কমে গেছে। একই সাথে জাঙ্ক ফুড, মিষ্টি পানীয় এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকসের ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক অভিভাবকত্বও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলছে। অনেক পরিবার বারবার বাইরে খেতে পছন্দ করে অথবা প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীল থাকে। এই অভ্যাসগুলি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হচ্ছে।
ফোর্টিস হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ইউনিট হেড, পেডিয়াট্রিক্স বিভাগ, ড. বিবেক জৈন জানান যে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার অনেক কারণ রয়েছে। খেলাধুলার অভাব, পড়াশোনার চাপ এবং পরিবারে স্থূলতার ইতিহাস শিশুদের মধ্যে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। যদি সময়মতো এই বিষয়ে মনোযোগ না দেওয়া হয়, তবে এই স্থূলতা বড় হওয়ার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রভাবও
স্থূলতার কারণে শিশুরা অনেক মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। স্থূলকায় শিশুদের প্রায়শই তাদের সঙ্গীরা টিজ করে। এর ফলে তারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং উদ্বেগের মতো সমস্যায় ভোগে। অনেক সময় এটি হতাশা এবং পড়াশোনায় অবনতির মতো সমস্যার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিরোধের দিকে পদক্ষেপ
ভালো খবর হলো শিশুদের স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট অভ্যাস বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সুষম খাদ্য প্রদান করা এর প্রথম পদক্ষেপ। বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবার, যার মধ্যে ফল, সবজি, গোটা শস্য এবং প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত থাকে, শিশুদের জন্য উপকারী। ভাজা জিনিস এবং মিষ্টি পানীয় সীমিত পরিমাণে দেওয়া উচিত।
প্রতিদিন ব্যায়ামের প্রয়োজন
শিশুদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপের জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এতে সাইক্লিং, আউটডোর খেলা বা যেকোনো ধরনের কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এর ফলে কেবল তাদের শরীরই সুস্থ থাকবে না, মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত হবে।
স্ক্রিন টাইমের উপর নিয়ন্ত্রণ
টিভি, মোবাইল এবং ভিডিও গেমে সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি। এর ফলে শিশুরা সক্রিয় থাকে এবং তাদের ঘুমের গুণগত মানও উন্নত হয়। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, খেলাধুলায় অংশ নেওয়া এবং নিয়মিত কার্যকলাপে যোগ দেওয়া শিশুদের স্থূলতা থেকে দূরে রাখে।
সচেতনতার বার্তা
জাতীয় শিশু স্থূলতা সচেতনতা মাস কেবল একটি তারিখ নয়, এটি শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি বার্তা। পরিবার, স্কুল এবং সমাজ একসাথে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে। এটি কেবল ওজন কমানোর বিষয় নয়, বরং আগামী প্রজন্মকে সুস্থ, আত্মবিশ্বাসী এবং সফল করে তোলার একটি প্রচেষ্টা।