ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের নেতৃত্ব: ২০২৬ সালে নতুন দিগন্তের সূচনা

ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের নেতৃত্ব: ২০২৬ সালে নতুন দিগন্তের সূচনা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রিও ডি জেনেইরোর ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন-এর মতো বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভারতের সুস্পষ্ট ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন।

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন যে, ভারত ২০২৬ সালে ব্রিকসের সভাপতিত্ব করবে এবং এটিকে "মানবতাই প্রথম" এই মূল মন্ত্রের সাথে নতুন দিশা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই প্রথমবার হবে যখন ভারত একটি সম্প্রসারিত ব্রিকসের (যেখানে এখন নতুন সদস্য দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত) নেতৃত্ব দেবে এবং এর বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

ব্রিকস ২০২৬: ভারতের সভাপতিত্বে পরিবর্তনের হাওয়া

প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও স্পষ্ট করেন যে, ভারতের নেতৃত্বে ব্রিকস এখন কেবল একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মঞ্চ হয়ে থাকবে না, বরং এটিকে জন-কেন্দ্রিক, উদ্ভাবন-সমর্থিত এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর বানানোর দিকে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সভাপতিত্বের মূল এজেন্ডা হবে স্থিতিশীলতা, উদ্ভাবন এবং টেকসই উন্নয়ন, যেখানে পরিবেশ সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ব্রিকস অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ভারতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কেবল একটি পরিবেশগত বা শক্তি-সংক্রান্ত বিষয় নয়। এটি জীবন ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়। জলবায়ু ন্যায়বিচার আমাদের জন্য একটি নৈতিক দায়িত্ব, যা থেকে আমরা পিছিয়ে আসতে পারি না। মোদী আন্তর্জাতিক সৌর জোট, দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো জোট এবং মিশন লাইফের মতো উদ্যোগের উল্লেখ করে জানান যে, ভারত পরিবেশগত দায়িত্বকে উন্নয়নের থেকে আলাদা মনে করে না, বরং উভয়কে একসঙ্গে নিয়ে চলতে বিশ্বাসী।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য: 'এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য'-এর মন্ত্র

কোভিড মহামারীর সময় ভারতের ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দেশটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করেছে এবং এখন ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য”-এর ভাবনা এখন ভারতের জনস্বাস্থ্য নীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

তিনি সামাজিক রোগ নির্মূল করার জন্য প্রস্তাবিত ব্রিকস স্বাস্থ্য অংশীদারিত্বের সমর্থন করে বলেন, এই উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করবে এবং গ্লোবাল সাউথকে নতুন স্বাস্থ্য প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করতে সাহায্য করবে।

'ব্রিকস ২.০': একটি নতুন রূপ, নতুন উদ্দেশ্য

প্রধানমন্ত্রী মোদী আসন্ন সভাপতিত্বের অধীনে ব্রিকসকে একটি 'ব্রিকস ২.০'-এরূপে উপস্থাপন করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন যে, সংগঠনটিকে এখন উদ্ভাবন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিশ্ব নীতি নির্ধারণে একটি অগ্রণী মঞ্চ হিসেবে দেখা উচিত। যেমন আমরা জি-২০-এর সভাপতিত্বকালে গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকারগুলোকে তুলে ধরেছি, তেমনই ব্রিকসের সভাপতিত্বেও আমরা ‘মানবতা আগে’ এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে কাজ করব, মোদী জোর দিয়ে বলেন।

মোদী স্পষ্ট করেন যে, ভারতের সভাপতিত্ব গ্লোবাল সাউথ অর্থাৎ উন্নয়নশীল ও পশ্চাৎপদ দেশগুলোর সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেবে। তিনি বলেন যে, ভারত এই দেশগুলোকে উন্নয়ন, ডিজিটাল রূপান্তর, সবুজ শক্তি এবং স্বাস্থ্য উদ্ভাবনে অংশীদার করবে, যাতে ব্রিকস একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সংগত ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে কাজ করতে পারে।

Leave a comment