মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কমাতে তার ভূমিকার দাবি করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাতে সফলও হয়েছিলেন।
নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০২৩ সালের মে মাসে কথিত সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার পরে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির জেরে ভারতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি আবারও দাবি করেছেন যে তিনিই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছিলেন এবং ইতিমধ্যে মাত্র ৫৯ দিনে ২১ বার এমন মন্তব্য করেছেন। কংগ্রেস এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানানোর দাবি করেছে।
ট্রাম্প বললেন - 'ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ আমি থামিয়েছি'
এক প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প বলেন, মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতি এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারতো। আমার হস্তক্ষেপ এবং আমেরিকার বাণিজ্যিক চাপের কারণে উভয় দেশ শান্তির পথে হেঁটেছিল। তিনি আরও বলেন, আমি ভারত ও পাকিস্তানকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে যুদ্ধ যদি না থামে, তবে তাদের আমেরিকান বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত এড়িয়েছেন এবং এখন তিনি দ্রুত ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার পরিকল্পনা করছেন।
কংগ্রেসের তীব্র আক্রমণ: কেন চুপ প্রধানমন্ত্রী মোদী?
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'X' (পূর্বে টুইটার) এ পোস্ট করেছেন: ৫৯ দিনে ২১ বার ট্রাম্প এই দাবি করেছেন যে তিনিই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছেন। এটা উদ্বেগের বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী কবে এর জবাব দেবেন?
জয়রাম রমেশ বলেন, ট্রাম্পের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে এটি ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি প্রশ্ন। তিনি আরও যোগ করেন যে ট্রাম্প এই বিষয়টি বারবার নির্বাচনী মঞ্চে তুলছেন এবং এটি ভারতীয় জনগণের সম্মানের সঙ্গে জড়িত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের নীরবতা নাকি কূটনৈতিক শিষ্টাচার?
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, মে মাসে পাকিস্তানের ডিজিএমও (DGMO) যোগাযোগ করেছিলেন এবং তার পরেই উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকার মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ট্রাম্পের মন্তব্যকে এড়িয়ে যেতে চাইছে, যাতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে। তবে বিরোধীরা এটিকে দুর্বলতা বা কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরছে।
যেসব প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন
- ট্রাম্পের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি কেন আসেনি?
- আমেরিকা কি সত্যিই বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করে ভারতকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছিল?
- ভারতের কূটনীতি কি এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে একজন বিদেশি নেতা ক্রমাগত তার ওপর মন্তব্য করছেন?
- যদি এটা মিথ্যা হয়, তবে ভারত সরকার কেন ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা করছে না?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার মন্তব্য একদিকে যেমন আমেরিকার নির্বাচনী রাজনীতির অংশ হতে পারে, তেমনই ভারতে এটি কূটনৈতিক মর্যাদা এবং জাতীয় সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।