প্রতি বছর ২৫শে জুলাই ক্যারোসেল দিবস (Carousel Day) পালিত হয়, যা আমাদের সেই সোনালী স্মৃতিগুলোর দিকে নিয়ে যায় যখন আমরা মেলায় ঘোরাঘুরির সময় ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের সাথে কথা বলতাম। রঙবেরঙের ঘোড়া, মিষ্টি সুর এবং বাচ্চাদের হাসি – ক্যারোসেল শুধু একটি ঘোরা নয়, এটি একটি অনুভূতি, যা সব বয়সের মানুষকে হাসার সুযোগ করে দেয়। এই বিশেষ দিনটি পালনের উদ্দেশ্য হল – ক্যারোসেলের সুন্দর ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে সম্মান জানানো, এবং নতুন প্রজন্মকে এর সাথে যুক্ত করা।
ক্যারোসেল কী?
ক্যারোসেল, যাকে আমরা প্রায়শই মেরি-গো-রাউন্ড নামেও জানি, একটি গোল আকারের ঘোরা, যা গোল-গোল ঘোরে। এতে কাঠ দিয়ে তৈরি রঙবেরঙের ঘোড়া বা অন্যান্য প্রাণীর মূর্তি থাকে, যেগুলোর উপর চড়ে মানুষ আনন্দ পায়। বাচ্চাদের জন্য তো এটা সবসময়ই বিশেষ, তবে বড়রাও এটি দেখলে তাদের শৈশবে ফিরে যায়।
ক্যারোসেলের ইতিহাস
যদি আপনি ভাবেন যে ক্যারোসেলের শুরু আমেরিকা থেকে হয়েছে, তাহলে আপনি জেনে অবাক হবেন যে ক্যারোসেলের শিকড় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে প্রথম এই ধরনের কাঠামো দেখা যায়, যেখানে একটি খুঁটি থেকে ঝুলন্ত ঘোরাগুলো ঘুরত। ‘ক্যারোসেল’ শব্দটির উৎপত্তি ইতালীয় শব্দ ‘garosello’ এবং স্প্যানিশ শব্দ ‘carosella’ থেকে হয়েছে, যার মানে হল 'ছোট যুদ্ধ'। ১২শ শতাব্দীতে আরব এবং তুর্কি ঘোড়সওয়ারদের অনুশীলন খেলাকে এই নাম দেওয়া হয়েছিল। ১৮শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের মেলাগুলোতে ক্যারোসেল জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কিন্তু আমেরিকাতে এর আগমন ঘটে ১৮৪০ এর দশকে, যখন ফ্রাঞ্জ ওয়াইসেনহোফার ওহাইওতে প্রথম ক্যারোসেল তৈরি করেন। যদিও তিনি এটির পেটেন্ট করেননি, তাই তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর আবিষ্কারক হিসেবে ধরা হয় না। পরে, উইলিয়াম স্নাইডার ১৮৭১ সালে ক্যারোসেলের পেটেন্ট করেন এবং আমেরিকাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এর আবিষ্কারক হিসেবে ধরা হয়।
ক্যারোসেল দিবসের শুরু কিভাবে হল?
ক্যারোসেল দিবসের প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৪ সালে বেট লার্জেন্ট এবং রোনাল্ড হপকিন্স। এই দুজন ন্যাশনাল ক্যারোসেল অ্যাসোসিয়েশন (NCA) এর সাথে যুক্ত ছিলেন, যা ১৯৭৩ সাল থেকে আমেরিকাতে ক্যারোসেলের সংরক্ষণ এবং ইতিহাসকে বাঁচানোর কাজ করে চলেছে। এই দিনটি পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হল – মানুষকে ক্যারোসেলের ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত করা এবং এটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা।
পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত ক্যারোসেল
যদি আপনি মনে করেন যে প্রতিটি ক্যারোসেল একই রকম হয়, তাহলে এই বিশেষ ক্যারোসেলগুলোর দিকে একবার তাকান:
- Musée des Arts Forains, প্যারিস – শিল্পকলা এবং ইতিহাসের সাথে যুক্ত একটি জাদুকরী অভিজ্ঞতা।
- Jane’s Carousel, নিউ ইয়র্ক – কাঁচের বাক্সে রাখা এই সুন্দর সৃষ্টি শহরের দৃশ্যের সাথে আরও চমৎকার লাগে।
- The House on the Rock, উইসকনসিন – অনন্য ডিজাইন এবং भव्यতার अद्भुत মেলবন্ধন।
- Stoomcarrousel, নেদারল্যান্ডস – ১৮৯৫ সালে তৈরি এই বাষ্পচালিত ক্যারোসেল ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।
ক্যারোসেল দিবস কিভাবে পালন করবেন?
১. স্থানীয় মেলা বা পার্কে যান
যদি আপনার শহরে কোনো ক্যারোসেল থাকে, তাহলে আজকের দিনটি সেখানে যাওয়ার সেরা সুযোগ। NCA এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার কাছের ক্যারোসেলটিকে খুঁজে নিতে পারেন।
২. বাচ্চাদের সাথে মজা করুন
আপনার বাচ্চাদের সাথে নিয়ে যান এবং তাদের জানান যে ছোটবেলায় আমরা কিভাবে এই ঘোরাতে মজা করতাম। বিশ্বাস করুন, আপনিও আবারও বাচ্চা হয়ে যাবেন।
৩. ক্যারোসেল মুভি দেখুন
ঘরে বসে এই দিনটি উদযাপন করতে চান? তাহলে 'Carousel' (1956) সিনেমাটি অবশ্যই দেখুন। এটি রজার্স এবং হ্যামারস্টেইনের মিউজিক্যাল মুভি, যেখানে প্রেম, দুঃখ এবং সুন্দর সঙ্গীতের এক अद्भुत संगम রয়েছে।
৪. ফটোশুট করুন এবং শেয়ার করুন
ক্যারোসেলের কাছে গিয়ে ছবি তুলুন এবং সেগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়াতে #CarouselDay হ্যাশট্যাগের সাথে শেয়ার করুন। এতে আরও মানুষ এই সুন্দর ঐতিহ্যের সাথে जुड़বে।
ক্যারোসেল কেন বিশেষ?
- শৈশবের স্মৃতি – প্রত্যেকের জীবনে ক্যারোসেলের কোনো না কোনো স্মৃতি অবশ্যই থাকে।
- পরিবারের সাথে সময় – এটি এমন একটি ঘোরা, যা সব বয়সের মানুষ একসাথে উপভোগ করতে পারে।
- সৌন্দর্য এবং কারিগরি – প্রতিটি ক্যারোসেল তার শিল্প, ডিজাইন এবং রং দিয়ে একটি গল্প বলে।
২৫শে জুলাই পালিত হওয়া ক্যারোসেল দিবস শৈশবের মিষ্টি স্মৃতি এবং ক্যারোসেলের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর দিন। রঙবেরঙের ঘোড়া, ঘূর্ণায়মান ঘোরা এবং বাচ্চাদের হাসি — এই সব মিলিয়ে একটি अनमोल অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এই দিনটি নতুন প্রজন্মকে এই সুন্দর ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়।