রিলায়েন্স গ্রুপের প্রাক্তন কর্ণধার অনিল আম্বানির নাম আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কয়েক সপ্তাহ আগেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি (Enforcement Directorate)। আর এখন তাঁকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে সিবিআই (Central Bureau of Investigation)। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন করে মামলা খোলা হয়েছে। এর ফলে দেশের আর্থিক জগতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
২০০০ কোটি টাকার প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক আর্থিক লেনদেনে গরমিল পাওয়া গেছে। অভিযোগ, প্রায় ২০০০ কোটি টাকার প্রতারণা সংঘটিত হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকার গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, সংস্থার আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে গিয়ে ভুয়ো তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। সিবিআই-এর হাতে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পৌঁছতেই দ্রুত তদন্ত শুরু হয়েছে।
অফিসে হানা দিয়ে তল্লাশি অভিযান
শুক্রবার ভোর থেকে দিল্লি ও মুম্বইয়ে অনিল আম্বানির অফিস ঘিরে ফেলেন সিবিআই আধিকারিকরা। বিভিন্ন নথি, ই-মেল যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের দাবি, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ইতিমধ্যেই তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। সংস্থার শীর্ষ কর্তাদেরও জেরা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, কিছু ডিজিটাল ডিভাইস ও হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই, যাতে প্রতারণার সূত্র মেলার সম্ভাবনা প্রবল।
আগেই পড়েছিলেন ইডির জেরার মুখে
এর আগে ইডি তাঁকে একাধিকবার ডেকে পাঠিয়েছিল। অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অনিল আম্বানিকে প্রশ্ন করা হয়। যদিও তিনি প্রতিটি অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, সব লেনদেনই আইন মেনে করা হয়েছে। ইডির জেরা শেষ না হতেই এবার নতুন করে সিবিআইয়ের তল্লাশি, ফলে অনিল আম্বানির আইনি সমস্যার জট আরও ঘনীভূত হল।
কর্পোরেট জগতের উত্থান থেকে পতনের গল্প
কখনও তিনি ছিলেন ভারতের অন্যতম ধনী শিল্পপতি। রিলায়েন্স সাম্রাজ্যের ভাগাভাগির পর অনিল আম্বানির হাতেই এসেছিল টেলিকম, পাওয়ার, ইনফ্রাস্ট্রাকচার-সহ একাধিক সংস্থা। শুরুতে তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্য তাক লাগিয়েছিল সবাইকে। কিন্তু ধীরে ধীরে ঋণের বোঝা এবং ভুল বিনিয়োগে ভেঙে পড়তে থাকে সাম্রাজ্য। এখন সেই ধস নেমে এসেছে আইনি সমস্যার রূপে। সিবিআইয়ের তদন্তে নতুন করে উঠে আসছে সেই আর্থিক বিপর্যয়ের নানা দিক।
বাজার ও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শেয়ার বাজারে প্রভাব পড়েছে। রিলায়েন্স গ্রুপের একাধিক সংস্থার শেয়ারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত যে, আইনি জটিলতার কারণে সংস্থার বাজারমূল্য আরও কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে এভাবে তদন্ত শুরু হলে সামগ্রিকভাবে কর্পোরেট জগতে নেতিবাচক বার্তা যায়।
প্রতিরক্ষা শিবিরে অনিল আম্বানি
তবে অনিল আম্বানির ঘনিষ্ঠমহল জানিয়েছে, এই তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর চাপেই আম্বানি পরিবারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। অনিল নিজেও বারবার বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। যদিও তদন্তকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ যথেষ্ট বলেই তারা পদক্ষেপ করছে।
তদন্তে নতুন মোড়ের ইঙ্গিত
সিবিআই ইতিমধ্যেই প্রাথমিক রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, খুব শীঘ্রই অনিল আম্বানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেকে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে তাঁকে হেফাজতে নিয়েও জেরা করা হতে পারে। যদি প্রমাণিত হয় যে ২০০০ কোটি টাকার প্রতারণার সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত, তবে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে, যাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
শিল্পপতি থেকে আসামির খাতায়?
এক সময়ে দেশের কোটি কোটি যুবকের কাছে সাফল্যের প্রতীক ছিলেন অনিল আম্বানি। কিন্তু আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন আদালত ও তদন্তকারীদের প্রশ্নবাণের মুখে। ইডি ও সিবিআই—দুটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে থাকায় তাঁর ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পথ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কর্পোরেট দুনিয়ায় তাঁর পুনরুত্থানের সম্ভাবনা এখন বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে।