উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার দেওয়াল তহসিলে মেঘ ফাটার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিখোঁজ এবং দুই জন গুরুতর আহত হয়েছেন, অন্যদিকে একটি গোশালা সহ একাধিক গবাদি পশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।
চামোলি: উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য জেলা চামোলিতে ফের মেঘ ফাটার ঘটনায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়েছে। দেওয়াল তহসিলের মোপটা গ্রামে রবিবার হঠাৎ মেঘ ফেটে প্রচুর পরিমাণে ধ্বংসস্তূপ গ্রামের দিকে বয়ে আসে। এই দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিখোঁজ বলে জানা গেছে, এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনায় একটি গোশালাও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়, যেখানে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০টি গবাদি পশু চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের মতে, ধ্বংসস্তূপ এতটাই দ্রুতগতিতে এসেছিল যে কেউ নিজেকে বাঁচানোর সুযোগই পায়নি। মুহূর্তে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসের দৃশ্যে পরিণত হয়। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে শুরু করে।
ভারী বৃষ্টির কারণে বাড়ি এবং গোশালা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে
মোপটা গ্রামের এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভয়াবহ। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তারা সিং এবং তাঁর স্ত্রীর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের কান্নার শেষ নেই। অন্যদিকে, গ্রামেরই বিক্রম সিং এবং তাঁর স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
একটি বড় গোশালাও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। গ্রামবাসীদের মতে, গোশালায় গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০টি। আপাতত এই পশুদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলে জানা যাচ্ছে। এই ঘটনায় পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চলছে
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। স্থানীয় পুলিশ, এসডিআরএফ এবং জেলা প্রশাসনের দলগুলি ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত রয়েছে। তবে একটানা বৃষ্টি এবং পার্বত্য রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে উদ্ধার অভিযানে নানা অসুবিধা হচ্ছে।
চামোলির জেলাশাসক সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন যে ত্রাণ দল যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার অনেক অংশে রাস্তা বন্ধ রয়েছে, যার ফলে উদ্ধারকারী দলগুলির ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। তবুও প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে যাতে কোনওভাবে মানুষের জীবন বাঁচানো যায়।
মুখ্যমন্ত্রী ধামী সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বের টুইটার) এ তথ্য শেয়ার করে জানিয়েছেন যে চামোলি এবং রুদ্রপ্রয়াগে মেঘ ফাটার ঘটনার পর প্রশাসনকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ধামী লিখেছেন যে তিনি নিরন্তর দুর্যোগ সচিব এবং জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সব রকম সাহায্য করা হবে। এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী বাবা কেদারনাথের কাছে প্রার্থনা করেছেন যাতে সকলে নিরাপদে থাকে।
বৃষ্টির কারণে গ্রামে ভয়ের পরিবেশ
মেঘ ফাটার এই ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মানুষ এখন তাদের বাড়িঘর এবং গবাদি পশুর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। গ্রামবাসীদের মতে, এই ধরনের ঘটনা বর্ষাকালে প্রায়শই ঘটে এবং সরকারের উচিত এ ব্যাপারে আগে থেকেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরাখণ্ডের সংবেদনশীল পার্বত্য অঞ্চলগুলি বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দুর্যোগ-প্রবণ বলে বিবেচিত হয়। একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস এবং মেঘ ফাটার মতো ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।