আসিয়ান সম্মেলনে মোদি সশরীরে থাকছেন না, ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন জয়শঙ্কর

আসিয়ান সম্মেলনে মোদি সশরীরে থাকছেন না, ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন জয়শঙ্কর
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কারণে রবিবার থেকে শুরু হতে চলা আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত বৈঠকগুলিতে অংশ নিতে সম্ভবত মালয়েশিয়া যাবেন না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিদেশ মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এই বৈঠকগুলিতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলা আসিয়ান (ASEAN) শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশগ্রহণ করবেন না। ভারত সরকার নিশ্চিত করেছে যে, বিদেশ মন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর এই সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সম্মেলনটি ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত হচ্ছে। তবে, এই সম্ভাবনা রয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদি ডিজিটাল মাধ্যমে এই বৈঠকে ভাষণ দিতে পারেন।

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কারণে সফর স্থগিত

সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদির একাধিক পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিশ্রুতির কারণে এবার তাঁর মালয়েশিয়া সফর স্থগিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ার সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হচ্ছে যে, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কম্বোডিয়া সফরের বিষয়েও বিবেচনা করা হচ্ছিল, কিন্তু সেটিও এখন স্থগিত করা হয়েছে।

ভারত স্পষ্ট করেছে যে, মালয়েশিয়ায় আয়োজিত হতে চলা আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলন এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন, যার ফলে ভারতের অংশগ্রহণের স্তর এবং কূটনৈতিক উপস্থিতি বজায় থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির ডিজিটাল অংশগ্রহণের সম্ভাবনা

যদিও মোদি এই সম্মেলনে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবেন না, তবে এই সম্ভাবনা প্রবল যে তিনি ভিডিও কনফারেন্সিং বা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভাষণ দেবেন। বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে তুলে ধরবে। ভারত গত বেশ কয়েক বছর ধরে আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রায় প্রতিটি আসিয়ান বৈঠকে ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এবং তাঁর নেতৃত্বে ভারত ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন দিশা দিয়েছে।

ট্রাম্পও অংশ নেবেন, বাড়বে বৈশ্বিক মনোযোগ

এই বছরের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বেশ কয়েকটি প্রধান সংলাপ সহযোগী দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ট্রাম্প ২৬ অক্টোবর দুই দিনের সফরে কুয়ালালামপুরে পৌঁছাবেন। এর ফলে আশা করা হচ্ছে যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে উচ্চ-স্তরের আলোচনা হবে।

ভারতের পক্ষে জয়শঙ্করের উপস্থিতি এই ইঙ্গিত দেয় যে ভারত এই মঞ্চে তার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করবে। জয়শঙ্করের এজেন্ডায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, পারস্পরিক বাণিজ্য, সামুদ্রিক সহযোগিতা এবং ডিজিটাল সংযোগের মতো বিষয়গুলি প্রধান থাকবে। ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে সম্পর্ক ১৯৯২ সালে একটি আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব হিসাবে শুরু হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে এটিকে পূর্ণ সংলাপ অংশীদারিত্বের মর্যাদা দেওয়া হয়, ২০০২ সালে এটিকে শীর্ষ সম্মেলন স্তরের অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত করা হয় এবং ২০১২ সালে এটিকে কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বর্তমানে আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশ রয়েছে — ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া। এই দেশগুলির সাথে ভারতের বার্ষিক বাণিজ্য ১২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন’-এ আসিয়ানের ভূমিকা কেন্দ্রীয় বলে বিবেচিত হয়।

Leave a comment