ভারতে কর ব্যবস্থার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে যুক্ত এবং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রজাদের উপর বোঝা না চাপানো। চাণক্যের ‘অর্থশাস্ত্র’-এ বর্ণিত কর নীতি আজও প্রাসঙ্গিক, যা ন্যায়সঙ্গত এবং ভারসাম্যপূর্ণ করব্যবস্থা নিশ্চিত করে। আধুনিক সরকারগুলিও এই নীতিগুলি গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ, কৃষক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উপর করের বোঝা কমানোর চেষ্টা করছে।
চাণক্য কর নীতি: ভারতে কর ব্যবস্থার ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরনো এবং এর উদ্দেশ্য সর্বদা প্রজাদের কল্যাণ। প্রাচীন ভারতের মহান অর্থনীতিবিদ চাণক্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে এমন এক কর নীতির বর্ণনা করেছেন, যেখানে কর জনগণের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না। আধুনিক ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি আয়করে ছাড় এবং জিএসটি হারে পরিবর্তন এনেছে, যাতে সাধারণ মানুষ, কৃষক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আর্থিক স্বস্তি পেতে পারেন। এই নীতি শুধুমাত্র কর ব্যবস্থাকে ন্যায়সঙ্গত করে না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যও বজায় রাখে।
কর ব্যবস্থায় যেন বোঝা না থাকে
চাণক্যের মতে, কর কখনই প্রজাদের উপর বোঝা হওয়া উচিত নয়। কর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যা জনগণ সহজেই পরিশোধ করতে পারে এবং যার পরেও তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে করের আকস্মিক বা অতিরিক্ত বৃদ্ধি প্রজাদের মধ্যে অসন্তোষ এবং বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে। তাই কর ধীরে ধীরে এবং পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা উচিত। আজকেও সরকারি কর সংস্কারে এই একই নীতি দেখা যায়। সম্প্রতি আয়করে ছাড় এবং প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর জিএসটি হার কমানো প্রমাণ করে যে আধুনিক সরকারগুলিও প্রজাদের উপর কম বোঝা চাপানোর নীতি গ্রহণ করছে।
মৌমাছি নীতি এবং ন্যায়সঙ্গত কর ব্যবস্থা
চাণক্য কর নীতি বোঝানোর জন্য মৌমাছির উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন মৌমাছি ফুল থেকে কেবল সেই পরিমাণ রসই সংগ্রহ করে যা ফুলের কোনো ক্ষতি করে না, তেমনই রাজারও উচিত প্রজাদের কাছ থেকে শুধুমাত্র সেই পরিমাণ কর সংগ্রহ করা যা তাদের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে না। এই নীতি আজ ন্যায়সঙ্গত এবং ভারসাম্যপূর্ণ কর ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা কর ব্যবস্থাকে কেবল রাজকোষ পূর্ণ করে না, বরং জনগণের স্বার্থেও কাজ করে।
প্রজাদের কল্যাণই সর্বাগ্রে
চাণক্যের মতে, যে কোনো রাজ্যের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রজাদের কল্যাণ। কর সংগ্রহ কেবল রাজকোষ পূর্ণ করার জন্য নয়, বরং জনগণের উপকারে ব্যবহার করা উচিত। এই অর্থ সড়ক নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা উচিত। এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল সমাজের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নই সম্ভব করে তোলে না, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করে।
চাণক্যের এই প্রাচীন কর নীতি আজও প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক কর সংস্কারে এটিকে গ্রহণ করে সরকারগুলি অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং প্রজাদের উপর বোঝা কমাতে চেষ্টা করছে।