হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, দেবশয়নী একাদশীর সঙ্গে সঙ্গেই চাতুর্মাস শুরু হয়েছে। এই চার মাসের সময়সীমা আষাঢ় শুক্ল একাদশী থেকে কার্তিক শুক্ল একাদশী পর্যন্ত চলে। এই সময়ে বিবাহ, মুণ্ডন, গৃহপ্রবেশের মতো মাঙ্গলিক কাজগুলি বন্ধ থাকে এবং সাধনা, সংযম ও ভক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
চাতুর্মাসে ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় যান এবং এই সময়ে তুলসী পূজার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। তুলসীকে বিষ্ণুর প্রাণপ্রিয় মনে করা হয়, এবং এই কারণে এই সময়ে তুলসীর কাছে প্রদীপ জ্বালালে অনেক অসাধারণ উপকার পাওয়া যায়।
বিষ্ণু এবং লক্ষ্মী উভয়েরই কৃপা লাভ হয়
তুলসী মাতাকে ভগবান বিষ্ণুর সবচেয়ে প্রিয় ভক্ত মনে করা হয়। ধারণা করা হয় যে তুলসী পূজার মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণু দ্রুত প্রসন্ন হন। চাতুর্মাসে যদি প্রতিদিন সন্ধ্যায় তুলসীর কাছে প্রদীপ জ্বালানো হয়, তবে বিষ্ণু ও লক্ষ্মী উভয়েরই কৃপা পাওয়া যায়। এই প্রদীপ দারিদ্র্য, বাধা, পারিবারিক কলহ এবং অর্থের অভাব দূর করে।
তুলসীর উপর প্রদীপ জ্বালানোর এই প্রথা কেবল ধর্মীয় নয়, মানসিক শান্তিও প্রদান করে। যখন বাড়িতে লক্ষ্মীর বাস হয়, তখন সমৃদ্ধি, সুখ এবং শান্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে।
ইতিবাচক শক্তি এবং শান্তির সঞ্চার
তুলসী গাছ নিজেই ইতিবাচক শক্তির উৎস। যখন তার সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয়, তখন সেই শক্তি আরও শক্তিশালী হয়। সন্ধ্যায় তুলসীর উপর প্রদীপ জ্বালালে বাড়ির পরিবেশ পবিত্র এবং সাত্ত্বিক হয়। এর ফলে নেতিবাচক শক্তির বিনাশ হয় এবং মানসিক চাপও কমে যায়।
বাড়িতে শান্তি বজায় থাকুক, সম্পর্কগুলিতে মাধুর্য এবং পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় থাকুক, এর জন্যেও এই প্রথাটি অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়।
গ্রহ দোষ ও আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি
জ্যোতিষশাস্ত্রে তুলসীর সামনে ঘি বা তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালানো বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহকে শক্তিশালী করে। এই দুটি গ্রহ ব্যক্তির জীবনে অর্থ, বিবাহ, শিক্ষা এবং সন্তান সম্পর্কিত পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। যদি কোনও ব্যক্তি আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, বারংবার চাকরিতে বাধা আসে বা গ্রহ শান্তির জন্য উপায় খুঁজছেন, তবে এই প্রতিকার বিশেষভাবে ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার দিন তুলসীর উপর প্রদীপ জ্বালালে গুরু দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং বাড়িতে অর্থের স্থিতিশীলতা আসে।
পিতৃদোষ ও রোগ দোষের উপশম হয়
যাদের কোষ্ঠীতে পিতৃদোষ থাকে, তাদের প্রায়শই জীবনে অকারণ বাধা, পারিবারিক অশান্তি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি परेशान করে। তুলসীর উপর প্রদীপ জ্বালানো একটি শক্তিশালী উপায় যা এই দোষগুলি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির মাধ্যমও হয়।
এছাড়াও, যারা বারবার রোগে আক্রান্ত হন, তাদের জন্যও এই প্রতিকার বিশেষ উপকারী। প্রদীপ থেকে নির্গত শিখা এবং তুলসীর শক্তি একত্রিত হয়ে শরীর ও মন উভয়কেই ইতিবাচক প্রভাব দেয়।
তুলসীর উপর প্রদীপ জ্বালানোর সময় যে বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে
- তুলসীর উপর প্রদীপ সন্ধ্যায় জ্বালাতে হবে। সকালে শুধুমাত্র জল নিবেদন করা উচিত।
- প্রদীপে খাঁটি গরুর ঘি বা তিলের তেল ব্যবহার করুন।
- প্রদীপ পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে রাখুন।
- প্রদীপ জ্বালানোর সময় ‘ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়’ বা ‘ওঁ তুলস্যৈ নমঃ’ মন্ত্র জপ করুন।
- প্রদীপের সাথে তাজা ফুল, অক্ষত এবং তুলসী পাতা অর্পণ করাও শুভ বলে মনে করা হয়।
চাতুর্মাসে তুলসী পূজা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে
চাতুর্মাসে তুলসীর সেবা, পূজা ও প্রদীপ জ্বালানো কেবল ভগবান বিষ্ণুকে প্রসন্ন করে না, বরং সম্পূর্ণ পরিবেশকে সাত্ত্বিক করে তোলে। এই চার মাস এক প্রকার আধ্যাত্মিক যাত্রার মতো, যেখানে তুলসী পূজা একটি বিশেষ পর্যায়ে আসে।