২০২৫ সালের ছট পূজা: তারিখ, নিয়ম ও তাৎপর্য

২০২৫ সালের ছট পূজা: তারিখ, নিয়ম ও তাৎপর্য

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হওয়া ছট মহোৎসব এবারে ২৫শে অক্টোবর ২০২৫, শনিবার থেকে শুরু হবে। চার দিন ধরে চলা এই উৎসব সমগ্র উত্তর ভারত, বিশেষ করে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লী সহ দেশ-বিদেশে বসবাসকারী পূর্বাঞ্চলীয়দের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়। সূর্য উপাসনা এবং কঠোর নিয়মাবলীর এই উৎসবে মহিলারা তো বটেই, পুরুষরাও সম্পূর্ণ সংযম ও শ্রদ্ধার সঙ্গে ব্রত পালন করেন।

প্রথম দিন: নहाय খায়ের মাধ্যমে শুরু

ছট পর্বের প্রথম দিনটি নहाय খায় নামে পরিচিত। এই দিনে ব্রতী অর্থাৎ ব্রত পালনকারী মহিলারা বা পুরুষরা পবিত্র নদী বা পুকুরে স্নান করে পূজা-অর্চনা করেন। ২৫শে অক্টোবর নहाय খায়ের দিনে ব্রতীরা সাধারণ খাবার খান। খাদ্য তালিকায় লাউয়ের সবজি এবং ছোলার ডাল থাকে, যা চালের সঙ্গে খাওয়া হয়। এই খাবার বিশুদ্ধ দেশী ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। নहाय খায়ের মাধ্যমে শরীর ও মনকে শুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

দ্বিতীয় দিন: খরনার দিনে ব্রতীরা নির্জলা উপবাস করেন

২৬শে অক্টোবর ২০২৫, রবিবার খরনার দিন। এই দিনে ব্রতীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জল পান না করে উপবাস করেন। সন্ধ্যায় বাড়িতে শুদ্ধভাবে পূজা করা হয় এবং প্রসাদ প্রস্তুত করা হয়। এই দিনে প্রসাদে গমের আটার রুটি এবং গুড়ের পায়েস তৈরি করা হয়। এটি মাটির উনুনে আমের কাঠ দিয়ে রান্না করা হয়। পূজার পরে এই প্রসাদ প্রথমে সূর্য দেবকে নিবেদন করা হয়, তারপর পরিবারের সকলে এটি প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করেন।

তৃতীয় দিন: অস্তগামী সূর্যকে সন্ধ্যা অর্ঘ্য দেওয়া হয়

ছট পূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হল তৃতীয় দিন, যখন অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়। এবারে ২৭শে অক্টোবর ২০২৫, সোমবার সন্ধ্যায় অর্ঘ্য দেওয়া হবে। এই দিনে দুপুরবেলার পর ব্রতী তাদের পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে পূজার সামগ্রী নিয়ে ঘাটে পৌঁছন। বাঁশের ঝুড়িতে ঠেকুয়া, চালের নাড়ু, নারকেল, কলা, আপেল, কমলালেবুর মতো ফল রাখা হয়। মহিলারা মাথায় दौरा রেখে ঘাট পর্যন্ত যান। তারপর অস্তগামী সূর্যকে জল অর্পণ করা হয় এবং সূর্য দেবতার আরাধনা করা হয়।

চতুর্থ দিন: উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে পর্বের সমাপ্তি

ছট পূজার শেষ দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ২৮শে অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার ঊষা অর্ঘ্য অর্থাৎ সকালের অর্ঘ্য দেওয়া হবে। এই দিনে সূর্যোদয়ের আগে ব্রতী ঘাটে পৌঁছন এবং উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য অর্পণ করেন। অর্ঘ্য দেওয়ার পর সকল ব্রতী পূজা সম্পন্ন করেন এবং এরপর ব্রত ভঙ্গ করা হয়। পারণের সময় লোকেরা জল, ফল এবং ঠেকুয়া খেয়ে ব্রত সমাপ্ত করেন।

সূর্য উপাসনার পর্ব হল ছট

ছট পূজাকে সূর্য উপাসনার পর্ব বলা হয়। হিন্দু ধর্মে সূর্যকে প্রত্যক্ষ দেবতা মানা হয়, যিনি জীবনদাতা। এই পর্বে সূর্যের উপাসনার পাশাপাশি ষষ্ঠী মায়েরও পূজা করা হয়, যিনি সন্তান সুখ ও পরিবারের সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন। ছট ব্রত পালনকারী মহিলারা তাঁদের সন্তানের দীর্ঘ জীবন, সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য এই কঠিন ব্রত করেন।

ছটে কঠোর ঐতিহ্য পালন করা হয়

ছট পূজার বিশেষত্ব হল, এখানে কোনও রকম ছাড় বা সুবিধার স্থান নেই। প্রতিটি নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়। ব্রতী সম্পূর্ণ শুদ্ধতা, সাত্ত্বিকতা এবং আত্মসমর্পণের সঙ্গে ব্রত করেন। এই সময়কালে বাড়ির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে পূজার সামগ্রী পর্যন্ত, সবকিছু শুদ্ধতা এবং ঐতিহ্য অনুসারে হয়। মাটির উনুনে প্রসাদ তৈরি করা, তামা বা পিতলের ঘটিতে অর্ঘ্য দেওয়া, বাঁশের ঝুড়ি ও কুলা ব্যবহার করা ছটের ঐতিহ্যের অংশ।

ঐতিহ্যপূর্ণ গানের সুর

ছটের সময় ঐতিহ্যপূর্ণ ভোজপুরী ও মৈথিলী গানের সুর প্রতিটি রাস্তা-মহল্লায় শোনা যায়। এই গানগুলি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির পরিচয়। মহিলারা ঘাটে দলবদ্ধভাবে ঐতিহ্যপূর্ণ ছট গান গান, যা পরিবেশকে সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক করে তোলে। অনেক স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

ঘাটগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে

প্রতি বছরের মতো ২০২৫ সালেও ছট উৎসব উপলক্ষে নগর নিগম, প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি একসাথে ঘাটগুলোতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা, আলো এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। দিল্লী, পাটনা, বেনারস, লখনউ, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করা হবে, যাতে ভক্তরা সহজে পূজা করতে পারেন।

দেশ-বিদেশে পালিত হয় এই আস্থার ঐতিহ্য

ছট পূজা এখন শুধু বিহার বা উত্তর প্রদেশে সীমাবদ্ধ নেই। দিল্লী, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাইয়ের মতো মহানগর ছাড়াও দুবাই, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রাও এই উৎসবকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পালন করেন। প্রবাসী ভারতীয়রা তাদের দেশে পুকুর, সুইমিং পুল বা সমুদ্রের ধারে পূজা করেন এবং তাদের দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

Leave a comment