ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় ছত্রপতি শিবাজীর ১২টি দুর্গ, গর্বিত ভারত

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় ছত্রপতি শিবাজীর ১২টি দুর্গ, গর্বিত ভারত

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের গৌরবময় ইতিহাস জড়িত ১২টি দুর্গকে ইউনেস্কো তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটি মারাঠি সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মুম্বাই: ভারতের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশাল স্বীকৃতি লাভ করেছে। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের আমলে নির্মিত ১২টি ঐতিহাসিক দুর্গকে ইউনেস্কো (UNESCO)-এর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি শুধু মহারাষ্ট্রের জন্য নয়, সমগ্র ভারতের জন্য একটি গর্বের বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ভারতের জন্য “গৌরব এবং অনুপ্রেরণা”-র উৎস হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

কোন কোন দুর্গ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে?

ইউনেস্কো কর্তৃক যে ১২টি দুর্গ বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলি হল:

  • রায়গড় দুর্গ
  • রাজগড় দুর্গ
  • প্রতাপগড় দুর্গ
  • পানহালা দুর্গ
  • শিবনেরী দুর্গ
  • লোহগড় দুর্গ
  • সালহের দুর্গ
  • সিন্ধুদুর্গ দুর্গ
  • বিজয়া দুর্গ দুর্গ
  • সুবর্ণদুর্গ দুর্গ
  • খান্দেরি দুর্গ
  • জিঞ্জি দুর্গ (তামিলনাড়ুতে অবস্থিত, শিবাজী মহারাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত)

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের বক্তব্য

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এই সাফল্যের ঘোষণা করে বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক এবং গৌরবময় মুহূর্ত। মহারাষ্ট্র সরকার আমাদের প্রিয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে প্রণাম জানায়। তাঁর তৈরি দুর্গগুলিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান দেওয়া, কেবল তাঁর দূরদৃষ্টি এবং রণকৌশলের স্বীকৃতি নয়, এটি আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মানের প্রতীক। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব এবং ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI), সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবদানের প্রশংসা করেছেন।

এই দুর্গগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কি?

সপ্তদশ থেকে উনিশ শতকের মধ্যে নির্মিত এই দুর্গগুলি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সামরিক দক্ষতা এবং স্বরাজ্যের ধারণার প্রধান উদাহরণ। এই দুর্গগুলির নির্মাণ সহ্যাদ্রি পর্বতমালা, কোঙ্কন উপকূল, দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা-এর মতো বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে করা হয়েছিল। এই দুর্গগুলি ভৌগোলিক অবস্থান, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং স্থানীয় স্থাপত্য কৌশলের এক অনন্য সঙ্গম-এর প্রতীক। প্রতিটি দুর্গের নিজস্ব পদক্রম, উদ্দেশ্য এবং প্রতীকী তাৎপর্য ছিল, যা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের রাজনৈতিক ও সামরিক দর্শনকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দিয়েছে।

অসাধারণ সর্বজনীন মূল্য (Outstanding Universal Value)

ইউনেস্কো কর্তৃক এই দুর্গগুলিকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হল, এগুলি "অসাধারণ সর্বজনীন মূল্য" (OUV) প্রদর্শন করে। এর অর্থ হল, এই ঐতিহ্যগুলি কেবল ভারতের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফড়নবিশ স্পষ্ট করেছেন যে এই ঐতিহাসিক স্বীকৃতির পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অঙ্গীকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি আরও জানান: সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং ASI গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের কাজ ও গবেষণা প্রদান করেছে।

মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী আশিষ শেলার ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে প্রযুক্তিগত উপস্থাপনা পেশ করেন। স্বয়ং দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বহু দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সমর্থন সংগ্রহ করেন। এই পদক্ষেপে কেবল এই দুর্গগুলির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন মিলবে না, এটি মহারাষ্ট্র এবং ভারতের পর্যটন শিল্পকেও উৎসাহিত করবে।

Leave a comment