ছত্তীশগড়ের বিজাপুরে ফের রক্তাক্ত হামলা

ছত্তীশগড়ের বিজাপুরে ফের রক্তাক্ত হামলা

সোমবার সকালে আবারও মাওবাদী হামলায় কেঁপে উঠল ছত্তীশগড়ের বিজাপুর। ইন্দ্রাবতী জাতীয় উদ্যানে ঘটে গেল ভয়ঙ্কর IED বিস্ফোরণ। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এতে শহিদ হয়েছেন দুই জওয়ান। দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলে মাওবাদীদের আস্তানা রয়েছে। তাই এখানে প্রায়শই নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। কিন্তু এবার লুকিয়ে পুঁতে রাখা বিস্ফোরণের ফাঁদে পড়ল নিরাপত্তা বাহিনী।

শহিদ দীনেশ নাগ, শোক ছড়াল বাহিনীতে

শহিদদের মধ্যে রয়েছেন ছত্তীশগড় জেলা পুলিশের রিজার্ভ গার্ডের (DRG) জওয়ান দীনেশ নাগ। সোমবার সকালে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন একটি বিশেষ অভিযানে। মাওবাদীদের ডেরায় হানা দিতে গিয়েই ঘটে এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ। সহকর্মীর শহিদ হওয়ার খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর সঙ্গী জওয়ানরা। দীনেশ নাগের মৃত্যুতে পুরো পুলিশ বাহিনীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মাওবাদীদের কৌশল বদল, হামলায় নতুন রূপ

যদিও গত কয়েক বছরে যৌথবাহিনীর অভিযানে মাওবাদী কার্যকলাপ অনেকটাই স্তিমিত হয়েছে, তবু মাঝে মধ্যেই এ ধরনের হামলা চালিয়ে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এবারও সেই একই কৌশল। জঙ্গলে পুঁতে রাখা আইইডির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিশানা করল মাওবাদীরা। পুলিশ আধিকারিকদের বক্তব্য, এই ধরনের আক্রমণ আটকানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

মাত্র দু’দিন আগেই খতম দুই শীর্ষ মাওবাদী

উল্লেখ্য, এর আগে মাত্র দু’দিন আগেই ছত্তীশগড়ের মোহলা-মানপুর অঞ্চলে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল দুই শীর্ষ মাওবাদী নেতা বিজয় রেড্ডি ও লোকেশ সালামের। বিজয়ের মাথার দাম ছিল ২৫ লক্ষ টাকা এবং লোকেশের মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা। এই সফল অভিযানের পর মাওবাদীদের রণকৌশল যে পাল্টাবে, তা অনুমান করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবারের বিস্ফোরণ সেই আশঙ্কাকেই সত্যি করে দিল।

ধারাবাহিক অভিযানে মাওবাদীদের ক্ষয়ক্ষতি

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মাওবাদীদের সম্পূর্ণ খতম করাই সরকারের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই বিগত কয়েক মাস ধরে চলছে ধারাবাহিক অভিযান। ইতিমধ্যেই শীর্ষ নেতা বাসবরাজু, চলপতি, সুধাকরের মতো একাধিক নামী মাওবাদীকে খতম করেছে বাহিনী। শুধু তাই নয়, বস্তার ডিভিশনের সাতটি জেলায় প্রায় ৮০০ মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এত কিছুর পরেও মাওবাদীরা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়নি। বরং হঠাৎ বিস্ফোরণ, গেরিলা হামলার মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

শীর্ষ নেতৃত্ব হারিয়ে দিশাহীন সংগঠন

বাসবরাজুর মৃত্যুর পর থেকেই মাওবাদী সংগঠন কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। নতুন কোনও উত্তরসূরি খুঁজে না পাওয়ায় সংগঠন ভিতরে ভিতরে ভাঙন ধরেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, এই সুযোগে অভিযান আরও তীব্র করলে মাওবাদীদের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে দেওয়া সম্ভব। তবে বিচ্ছিন্ন হামলার কারণে এখনো জঙ্গলের পরিস্থিতি অশান্ত।

নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কবার্তা

IED বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আধিকারিকদের দাবি, প্রতিটি অভিযানে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, মাওবাদীরা প্রতিটি পদক্ষেপে কৌশল পাল্টাচ্ছে। তারা আর সরাসরি সংঘর্ষে নামছে না, বরং আইইডি ও গেরিলা আক্রমণকে বেছে নিচ্ছে। ফলে জঙ্গলে প্রবেশের আগে প্রতিটি ইঞ্চি জমি খতিয়ে দেখতে হচ্ছে বাহিনীকে।

আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা

মাওবাদী হামলা মানেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। বিজাপুর ও সংলগ্ন জঙ্গলে প্রতিদিনই কানে ভেসে আসছে গুলির শব্দ, বিস্ফোরণের আওয়াজ। সাধারণ মানুষ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। শহিদ জওয়ানদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামে গ্রামে শোক নেমে এসেছে। আর পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া সেই দুই জওয়ান আর ফিরবেন না—এই বাস্তবতা আঁধার নামিয়েছে গোটা অঞ্চলে।সংক্ষেপে বলা যায়, ধারাবাহিক অভিযানে মাওবাদীরা বড়সড় ধাক্কা খেলেও তাদের অস্তিত্ব এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। মাঝে মধ্যেই আইইডি বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা প্রমাণ করছে, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা লাল সন্ত্রাসের বিপদ এখনও কাটেনি।

Leave a comment