চীনের বিরুদ্ধে বিরল মৃত্তিকা খনিজ চুরির অভিযোগ

চীনের বিরুদ্ধে বিরল মৃত্তিকা খনিজ চুরির অভিযোগ

চীনের গুপ্তচরবৃত্তি এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সংস্থা Ministry of State Security বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে চীনের রেয়ার আর্থ মিনারেলস (Rare Earth Minerals) চুরি করার অভিযোগ করেছে। চীনের দাবি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু বিদেশি সংস্থা এবং তাদের এজেন্ট ক্রমাগতভাবে এই মূল্যবান ধাতুগুলো অবৈধভাবে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সংস্থার মতে, এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয় নয়, জাতীয় নিরাপত্তারও বিষয়।

মেল পার্সেল এবং ভুল লেবেলের মাধ্যমে চোরাচালান

মন্ত্রকের প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশি সংস্থাগুলো চীনে উপস্থিত কিছু লোককে প্রভাবিত করেছে এবং তাদের সাথে মিলে একটি চোরাচালান নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেয়ার আর্থ মিনারেলসকে চীন থেকে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই উপাদানগুলো পার্সেলের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছিল, যেগুলোর উপরে "Not originally made in China" (মূলত চীনে তৈরি নয়) এর মতো ভুল লেবেল লাগানো ছিল। এছাড়াও পার্সেলের ভেতরের জিনিসপত্রও লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

গুঁড়োর মধ্যে এবং জলের বোতলে লুকানো রেয়ার আর্থ মেটেরিয়ালস

মন্ত্রক জানিয়েছে, এই দুর্লভ খনিজগুলো সিরামিক টাইলসের উপাদানের সাথে মিশিয়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে সন্দেহ না হয়। কিছু ক্ষেত্রে এগুলোকে জলের বোতলে লুকিয়ে অন্য দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। চীন এই ধরনের কার্যকলাপকে জাতীয় সম্পদের চোরাচালান এবং দেশের নিরাপত্তার সাথে আপস করা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

চীনের জনগণের কাছে আবেদন

চীনের নিরাপত্তা মন্ত্রক সাধারণ নাগরিকদের কাছেও আবেদন জানিয়েছে যে, যদি তারা দেশের রেয়ার রিসোর্স সম্পর্কিত কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতে পান, তাহলে যেন তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানান। মন্ত্রকের বক্তব্য, দেশের সম্পত্তির রক্ষা করা শুধুমাত্র সরকারের নয়, প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।

নাম না করে বিদেশি সংস্থাগুলোর ওপর অভিযোগ

লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, চীন কোনো দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ করেনি। কিন্তু তাদের বক্তব্য এবং পরিস্থিতি দেখে মনে করা হচ্ছে যে, তাদের ইঙ্গিত আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলোর দিকে। চীন ও আমেরিকার মধ্যে আগে থেকেই প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা চলছে।

আমেরিকা ও ইউরোপের উপর চীনের চাপ

চীন গত কয়েক বছরে রেয়ার আর্থ মেটেরিয়ালসকে কৌশলগত অস্ত্রের মতো ব্যবহার করছে। ইলেকট্রিক ভেহিকেলস (Electric vehicles), ডিফেন্স ইকুইপমেন্ট (defence equipment) এবং অ্যাডভান্সড টেকনোলজিতে (advanced technology) ব্যবহৃত এই মিনারেলসগুলোর উপর চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপ, উভয় অঞ্চলই চীন থেকে আসা এই সরবরাহের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।

ট্রাম্প-জিনপিং বৈঠকের জল্পনা

এই ঘটনাগুলোর মধ্যে, এমন জল্পনাও চলছে যে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে একটি বৈঠক খুব শীঘ্রই হতে পারে। যদি এমনটা হয়, তবে এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মোড় আনতে পারে। যদিও, এই বৈঠকের আগে রেয়ার আর্থ মেটেরিয়ালসের মতো বিষয়গুলোতে একমত হওয়া সহজ হবে না।

রপ্তানি বিধি নিয়ে চীনের সতর্কতা

চীন সম্প্রতি আমেরিকার সাথে হওয়া বাণিজ্য আলোচনায় এই বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে যে, তারা রেয়ার আর্থ মিনারেলসের রপ্তানি লাইসেন্স পুনর্বিবেচনা করবে। তবে, একই সাথে এটিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই সম্পদকে তারা শুধুমাত্র কৌশলগত জাতীয় স্বার্থের অধীনেই নিয়ন্ত্রণ করবে। এমন পরিস্থিতিতে চীন এই মিনারেলসগুলোকে শুল্ক আলোচনার দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

টেকনিক্যাল চিপস এবং শুল্ক নিয়ে বাড়ছে আলোচনা

চীন ও আমেরিকার মধ্যে হাই টেকনোলজি, বিশেষ করে এআই (AI) চিপস নিয়েও দীর্ঘ দিন ধরে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি দুই দেশ কিছু টেকনিক্যাল কন্ট্রোল স্থগিত করতে এবং রপ্তানি বিধি শিথিল করতে আলোচনা করেছে। এর উদ্দেশ্য হল দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানো।

রেয়ার আর্থ মিনারেলস কেন বিশেষ

রেয়ার আর্থ মিনারেলসে এমন 17টি উপাদান রয়েছে যা আধুনিক প্রযুক্তিতে খুবই জরুরি। এগুলো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক গাড়ি, সামরিক সরঞ্জাম এবং রিনিউয়েবল এনার্জি সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের প্রায় 60 থেকে 70 শতাংশ রেয়ার আর্থ মিনারেলসের উৎপাদন চীনে হয়। এই কারণে চীনের এইগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ পুরো বিশ্বের সাপ্লাই চেইনকে প্রভাবিত করে।

Leave a comment