চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশনে চীনের নতুন প্রস্তুতি

চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশনে চীনের নতুন প্রস্তুতি

চীন তার চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। চীনের লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে তিনজন মহাকাশচারীকে চাঁদে পাঠানো।

China Space Plan: চীন মানবযুক্ত চন্দ্রাভিযানের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তাদের অত্যাধুনিক যান মেংঝোউ (Mengzhou)-এর রিটার্ন ক্যাপসুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এস্কেপ টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ১৭ জুন অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় চীন দেখিয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর স্বপ্ন এখন শুধু কথার কথা নয়, বরং কঠিন প্রস্তুতির মাধ্যমে তা সত্যি হওয়ার পথে।

চীনা ভাষায় মেংঝোউ-এর অর্থ হল স্বপ্নের জাহাজ, এবং সত্যিই এই যানটি চীনের বহু দশকের পুরনো চাঁদে মানুষ পাঠানোর স্বপ্নকে সত্যি করার দিকে একটি বড় আশা জাগিয়েছে। এই রিটার্ন ক্যাপসুলের জিরো-হাইট এস্কেপ ফ্লাইট টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে রকেট উৎক্ষেপণের প্রাথমিক মুহূর্তে যদি মিশন ব্যর্থ হয়, তবে এই সিস্টেম মহাকাশচারীদের নিরাপদে বের করে আনতে সাহায্য করবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এইবার এস্কেপ সিস্টেমটিকে যানের ভিতরেই একত্রিত করা হয়েছে, যেখানে আগের শেনঝোউ মিশনে এই কাজটি রকেটের সঙ্গে যুক্ত একটি সিস্টেম করত। এর ফলে মেংঝোউ আরও স্বনির্ভর এবং সুরক্ষিত হয়েছে। চীনের অ্যারোস্পেস সাইন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (CASIC)-এর চতুর্থ একাডেমি এই নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যেখানে কঠিন জ্বালানি দ্বারা চালিত SRM অর্থাৎ সলিড রকেট মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে যানটিকে দ্রুত আলাদা করে মহাকাশচারীদের সুরক্ষিত রাখা যাবে।

এবার ২০২৬ সালে লং মার্চ ১০এ-এর পালা

চীনের পরবর্তী বড় পদক্ষেপটি ২০২৬ সালে নির্ধারিত হয়েছে, যখন লং মার্চ ১০এ রকেটের উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনটিকে চীনা মানবযুক্ত চন্দ্র অভিযানের মেরুদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ এখান থেকেই সেই প্রযুক্তিগুলির চূড়ান্ত অনুশীলন হবে যা ২০৩০ সালে আসল চন্দ্র অবতরণে ব্যবহার করা হবে। চীনের মহাকাশ সংস্থা (CNSA)-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তিনবার লং মার্চ ১০ রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে, যাতে মিশনের প্রতিটি দিক ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায়।

অবশেষে ২০৩০ সালের মিশনে তিনজন মহাকাশচারী মেংঝোউ যানের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছাবেন, যেখানে তাঁরা একটি ল্যান্ডারের সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং তারপর পৃষ্ঠে নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করবেন।

দ্রুত গতিতে বদলাচ্ছে স্পেস রেসের ছবি

গত বছর, মে ২০২৩ সালে চীন চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মাটি এবং পাথরের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য চ্যাংই-৬ মানুষবিহীন মিশন পাঠিয়েছিল। সেই সাফল্য চীনকে এই বিশ্বাস জুগিয়েছে যে পরবর্তী লক্ষ্য হবে মানুষকে চাঁদে পাঠানো। আমেরিকা, ভারত এবং জাপানের মতো দেশগুলিও মানবযুক্ত চন্দ্র মিশনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, তবে চীনের এই পদক্ষেপ মহাকাশ প্রতিযোগিতায় তাদের বিশাল সুবিধা দিতে পারে।

বিশেষ করে মেংঝোউ-এর এস্কেপ সিস্টেমে যে দেশীয় সেন্সর এবং নতুন নকশার প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে, তা দেখায় যে চীন এখন পশ্চিমা প্রযুক্তিগুলির উপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না, বরং তাদের নিজস্ব সক্ষমতার উপর নির্ভর করে মানুষকে চাঁদে অবতরণ করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

২০৩০ সালে নতুন ইতিহাস লেখার প্রস্তুতি

২০৩০ সালের আশেপাশে, যদি চীন তাদের কর্মসূচিতে অটল থাকে, তবে মেংঝোউ যান তিনজন মহাকাশচারীকে চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে ল্যান্ডারের মাধ্যমে মহাকাশচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠে নামবেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অনুসন্ধান চালাবেন, এবং তারপর ফিরে এসে মেংঝোউ-এর রিটার্ন ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফিরবেন। চীনের এই মিশনটি কেবল তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রদর্শন করবে না, বরং মহাকাশ ক্ষেত্রে তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আবারও সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে।

Leave a comment