মার্কিন শুল্ক নীতিতে কূটনৈতিক মোড়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখনই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন চমক দেখা দিল। এবার ভারতের পাশে দাঁড়াল সেই চিন, যাকে নিয়ে নয়াদিল্লি–বেজিং সম্পর্ক বহুবার টানাপোড়েনের মুখোমুখি হয়েছে।
চিনের মুখপাত্রের স্পষ্ট বার্তা
বৃহস্পতিবার বেজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন জানান, চিন সবসময় শুল্ক অপব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। আমাদের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট ও ধারাবাহিক। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যখন নির্বাহী আদেশে সই করে ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্কের কথা ঘোষণা করলেন, তখনই চিন মনে করিয়ে দিল— এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।
ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু অতিরিক্ত ২৫ শতাংশেই থামেননি। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। প্রথম ধাপে ৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে ২৫% কর, আর দ্বিতীয় ধাপে ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হবে আরও ২৫%। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন— রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারত এখন চিনের খুব কাছাকাছি।
হোয়াইট হাউসে ক্ষোভের ভাষা
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যদি শান্তিচুক্তি হয়, তবে কি ভারত থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, এখন তারা ৫০% কর দেবে, তারপর দেখা যাবে। যখন প্রশ্ন ওঠে— চিন ও তুরস্কও তো রাশিয়ার তেল কিনছে, তাহলে শুধুই ভারতের উপর এত কড়া শাস্তি কেন? ট্রাম্পের জবাব, ভারতের উপর শুল্ক মাত্র ৮ ঘণ্টা আগে আরোপ হয়েছে। এবার দেখুন, গৌণ নিষেধাজ্ঞার বন্যা বয়ে যাবে।
ভারতের জন্য কঠিন শাস্তি, অন্যদের জন্য ছাড়
এই সিদ্ধান্তে দেখা গেছে স্পষ্ট বৈষম্য— ভারতের জন্য ৫০% কর, অথচ চিনের জন্য ৩০% এবং তুরস্কের জন্য মাত্র ১৫%। স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছে।
ভারতের অবস্থান পরিষ্কার
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ভারতের তেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বাজার পরিস্থিতি এবং ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তার কথা ভেবেই নেওয়া হয়েছে। এই শুল্ক শুধু অন্যায্য নয়, বরং অযৌক্তিকও। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
চিনের সমর্থনে নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ
চিনের এই অপ্রত্যাশিত সমর্থন শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বরাজনীতিতে ভারত–চিনের সম্পর্ক প্রায়শই প্রতিযোগিতার হলেও, মার্কিন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে এই যৌথ অবস্থান ভবিষ্যতের জন্য নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তার ছায়া
ট্রাম্পের ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্বেগ বাড়ছে। একদিকে আমেরিকার শুল্কবিধি, অন্যদিকে ভারত ও চিনের নতুন অবস্থান— সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও তেলবাজারে অস্থিরতা আরও গভীর হতে চলেছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।