জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বৈশ্বিক শান্তি ও ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি গাজায় ২০,০০০ সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, টু-স্টেট সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন এবং শেষে “ওঁ শান্তি, শান্তি ওঁ” মন্ত্র দিয়ে বার্তা দিয়েছেন।
UNGA: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এমন একটি ভাষণ দিয়েছেন যা পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রায় ১৯ মিনিট দীর্ঘ এই ভাষণে তিনি বৈশ্বিক শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সমান সুযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
সুবিয়ান্তো সতর্ক করে দিয়েছেন যে ভয়, বর্ণবাদ, ঘৃণা, নিপীড়ন এবং বর্ণবৈষম্য দ্বারা অনুপ্রাণিত চিন্তাভাবনা মানবতার ভবিষ্যতকে বিপদে ফেলতে পারে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে যদি বিশ্ব সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা এমন একটি যুগে প্রবেশ করতে পারি যেখানে অনন্ত যুদ্ধ এবং সহিংসতাই প্রাধান্য পাবে।
তাঁর ভাষণের শেষে তিনি সংস্কৃত মন্ত্র — “ওঁ শান্তি, শান্তি ওঁ” — উচ্চারণ করেন। এই বার্তা বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতির আশা জাগায়।
গাজায় শান্তি মিশনের জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাব
প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো গাজা ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের অবনতিশীল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে ইন্দোনেশিয়া শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
সুবিয়ান্তো ঘোষণা করেছেন যে ইন্দোনেশিয়া ২০,০০০ বা তারও বেশি সৈন্যকে জাতিসংঘ (UN) শান্তি মিশনের অধীনে মোতায়েন করতে প্রস্তুত। তিনি বলেছেন যে ইন্দোনেশিয়া কেবল ভাষণে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং মাঠ পর্যায়েও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চায়।
তিনি বলেছেন,
“ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীতে ইতিমধ্যেই অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারীদের মধ্যে একটি। আমরা শুধু কথায় নয়, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিরক্ষা করব।”
টু-স্টেট সমাধানের সমর্থনে বড় বিবৃতি
প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের বিষয়েও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে বিশ্বকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (Two-State Solution) বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেছেন যে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল উভয় দেশেরই স্বাধীন ও নিরাপদে অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। আরব, ইহুদি, মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় একসঙ্গে সম্প্রীতি, শান্তি ও সহযোগিতায় বাস করতে পারে।
সুবিয়ান্তো বলেছেন,
“সহিংসতা কোনো রাজনৈতিক সংঘাতের সমাধান হতে পারে না। সহিংসতা কেবল আরও সহিংসতার জন্ম দেয়। আমাদের একটি স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত সমাধানের দিকে এগোতে হবে।”
ভয়, বর্ণবাদ এবং নিপীড়ন বিষয়ে কঠোর বার্তা
প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো তাঁর ভাষণে বর্ণবাদ এবং বর্ণবৈষম্যকে বৈশ্বিক শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলেছেন। তিনি বলেছেন যে বিশ্বে ভয় ও ঘৃণা ছড়ানো শক্তিগুলি সমাজকে বিভক্ত করছে।
তাঁর মতে, যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায়পূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন যাতে তারা যেকোনো ধরনের বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।
ন্যায়সম্মত বিশ্ব ব্যবস্থার ওপর জোর
সুবিয়ান্তো বলেছেন যে বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে একটি ন্যায়সম্মত ও স্থিতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রতিটি দেশ সমান সম্মান ও সুযোগ পায়। তিনি আরও বলেছেন যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসমতা, দারিদ্র্য এবং অবিচার দূর না করে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি আনা সম্ভব নয়।
তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বরকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তাঁর বিশ্বাস যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেবল বড় বড় বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়, বরং সেগুলি সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ইন্দোনেশিয়ার বৈশ্বিক ভূমিকা নিয়ে বার্তা
সুবিয়ান্তো বলেছেন যে ইন্দোনেশিয়া সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার সমর্থক থেকেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার দায়িত্ব হল বৈশ্বিক শান্তির জন্য তার ভূমিকা পালন করা।
“ওঁ শান্তি, শান্তি ওঁ” — বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তা
তাঁর ভাষণের শেষে প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো সংস্কৃত মন্ত্র “ওঁ শান্তি, শান্তি ওঁ” উচ্চারণ করে পুরো বিশ্বকে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। এই পদক্ষেপটি বৈশ্বিক মঞ্চে অনন্য বলে বিবেচিত হয়েছে কারণ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতা ভারতীয় সংস্কৃতির এই গভীর আধ্যাত্মিক মন্ত্রটি ব্যবহার করছিলেন।