টাইফুন রাগাছা তাইওয়ানকে ব্যাপক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু, ১২৪ জন নিখোঁজ এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
রাগাছা টাইফুন: তাইওয়ান বর্তমানে প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়ংকর আঘাতের শিকার। টাইফুন রাগাছা (Typhoon Ragasa) পূর্ব তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যে পুরো এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১২৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অনেক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, জনবসতিগুলি খালি হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট হ্রদই মৃত্যুর কারণ
এই ট্র্যাজেডির শুরু ভারী বৃষ্টির পর ভূমিধস (landslide) দিয়ে। পাহাড় থেকে ধসে পড়া ধ্বংসাবশেষ হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে একটি অস্থায়ী হ্রদ তৈরি করে। বেশ কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হতে থাকে এবং এই হ্রদের জল বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার হঠাৎ হ্রদের বাঁধ ভেঙে যায় এবং প্রায় ৯ কোটি টন জলের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি টন জল বেরিয়ে আসে। এই জল আশেপাশের গুয়াংফু টাউনশিপ (Guangfu Township) জুড়ে বন্যা সৃষ্টি করে এবং দেখতে দেখতে পুরো এলাকা ডুবে যায়।
গুয়াংফু টাউনশিপে সবচেয়ে বড় প্রভাব
স্থানীয় প্রশাসন অনুযায়ী, গুয়াংফু টাউনশিপ এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার ৮,৫০০ বাসিন্দার প্রায় ৬০ শতাংশ লোক তাদের বাড়ির উপরের তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বাকিরা নিরাপত্তার জন্য তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছেন। গ্রামের অনেক অংশ সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এবং সেখানে পৌঁছানো উদ্ধারকারী দলগুলির জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে অসুবিধা
তাইওয়ানের ফায়ার সার্ভিস বিভাগ বুধবার জানিয়েছে যে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে, তবে একটানা বৃষ্টি এবং ভাঙা রাস্তার কারণে দলগুলিকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হেলিকপ্টার এবং নৌকার সাহায্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে এখনও শত শত মানুষ নিখোঁজ এবং অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনদের খোঁজে ঘুরছে।
২০০৯ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো রাগাছা
টাইফুন রাগাছার ধ্বংসযজ্ঞ তাইওয়ানকে ২০০৯ সালের সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যখন টাইফুন মোরাকোট (Typhoon Morakot) দক্ষিণ তাইওয়ানে তাণ্ডব চালিয়েছিল। সেই ঝড়ে প্রায় ৭০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাগাছার সৃষ্ট বিপর্যয়টিও একই মাত্রার হতে পারে যদি সময়মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়।
সরকার জরুরি পরিকল্পনা শুরু করেছে
তাইওয়ান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ত্রাণ শিবির (Relief Camps) তৈরি করা হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। খাদ্য, জল এবং ঔষধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরনের ভয়ংকর টাইফুন (Severe Typhoons) এবং বৃষ্টির তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) সাথে সম্পর্কিত। আগে যেখানে তাইওয়ানে এই ধরনের ঝড় প্রতি কয়েক বছর অন্তর আসত, এখন সেগুলির পুনরাবৃত্তি এবং শক্তি বাড়ছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও গুরুতর হতে পারে যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) নিয়ন্ত্রণ করা না হয়।