জাতিসংঘের বৈঠকে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ম্যাক্রোঁ এটিকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল এর বিরোধিতা করেছে।
জাতিসংঘের বৈঠক: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড় এসেছে। জাতিসংঘের (UN) বৈঠকের সময় ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই পদক্ষেপকে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা বজায় রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি
ফ্রান্সের আগে অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এর মধ্যে কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া অন্তর্ভুক্ত। এই সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে ফিলিস্তিনের একটি রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার অধিকার আছে এবং এটিকে কোনো পুরস্কার হিসেবে দেখা উচিত নয়। ফ্রান্স এটিকে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জাতিসংঘের অবস্থান: দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানই একমাত্র বিকল্প
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুটেরেস স্পষ্ট করেছেন যে ফিলিস্তিনি জাতির মর্যাদা একটি অধিকার, কোনো পুরস্কার নয়। তিনি আরও পুনরাবৃত্তি করেছেন যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানই একমাত্র বিকল্প। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন যে সোমবার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এই বিষয়ে গুরুতর আলোচনা করা হবে। তিনি মনে করেন যে এটিই বর্তমান সংঘাত এবং চ্যালেঞ্জগুলির সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।
ইসরায়েলের বিরোধিতা
তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি জাতির মর্যাদাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন যে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে কোনো ধরনের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে রাজনৈতিক সুবিধা দেয় এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও ঝুঁকি তৈরি করে।
ফ্রান্সের যুক্তিযুক্ত দাবি
ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা বজায় রাখা বৈশ্বিক শান্তির জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেছিলেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সময়মতো প্রচেষ্টা চালায়, তবে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা যেতে পারে। ফ্রান্স এও জোর দিয়েছে যে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা এবং তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা আনা জরুরি।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ কেবল ইউরোপ নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে। এর ফলে অন্যান্য দেশগুলোর ওপরও চাপ বাড়তে পারে যে তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিক। অন্যদিকে, ইসরায়েল ও আমেরিকার মতো দেশগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও এই পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ
তবে, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দ্বারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সহজ হবে না। গাজা ও পশ্চিম তীরে হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর কার্যকলাপ, নিরাপত্তার বিষয় এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সমস্ত দিকগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।