গাজিয়াবাদে ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুল রহমান সিদ্দিকীকে ছাঙ্গুর গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগসাজশ এবং ভুক্তভোগীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার কড়া পদক্ষেপ নিয়ে সাসপেনশনের নির্দেশ জারি করেছেন।
UP News: উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলায় পুলিশ মহলে সেই সময় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে যখন ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুল রহমান সিদ্দিকীকে সাসপেন্ড করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধ ধর্মান্তরকরণ চক্র চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত জামালউদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুরের গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগসাজশের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে যখন জানা যায় যে সিদ্দিকী শুধুমাত্র একজন ভুক্তভোগীকে হুমকিই দেননি, বরং তাকে চুপ থাকার জন্যেও বলেছিলেন। গাজিয়াবাদের পুলিশ কমিশনার জে. রবীন্দ্র গৌড় এই পুরো ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে সিদ্দিকীকে সাসপেন্ড করেছেন।
ধর্মান্তরকরণের শিকারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ
তথ্য অনুযায়ী, এই পুরো ঘটনাটি ২০১৯ সালের যখন মেরঠে একটি ভুক্তভোগী পরিবার তাদের মেয়ের অপহরণ এবং জোর করে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে সিভিল লাইন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ করা হয়েছে যে সেই সময় থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুল রহমান সিদ্দিকী শুধুমাত্র মামলা দায়ের করতেই অস্বীকার করেননি, বরং ভুক্তভোগীর পরিবারকে হুমকি দেন যে তারা যদি এই বিষয়ে মুখ খোলে তাহলে ফল ভুগতে হবে। এই হুমকির কারণে পরিবারটি ভয় পেয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চুপ থাকে।
লভ জিহাদ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে লভ জিহাদের শিকার বানিয়ে জোর করে ধর্মান্তরকরণ করা হয়েছে। পরিবার এর প্রতিবাদ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। উল্টে তাদের হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের দাবিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই সময় ছাঙ্গুর গ্যাং এবং তার সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
ছাঙ্গুরের জিজ্ঞাসাবাদে পর্দাফাঁস
উল্লেখযোগ্য যে, অবৈধ ধর্মান্তরকরণ চক্রের প্রধান জামালউদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুর বর্তমানে এটিএস (অ্যান্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড)-এর হাতে বন্দী। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ছাঙ্গুর বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে এটিও জানা যায় যে সে বিভিন্ন স্তরে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকে সাহায্য পেত। ছাঙ্গুর জানিয়েছে যে ইন্সপেক্টর আব্দুল রহমান সিদ্দিকী শুধুমাত্র ২০১৯ সালে তাকে সাহায্য করেননি, বরং মামলাটি চাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয় দেখিয়েছিলেন। এটিএস-এর তদন্তে এই বিষয়গুলোর সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গাজিয়াবাদ পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড করে।
আগেও প্রশ্ন উঠেছে
এই প্রথমবার নয় যখন আব্দুল রহমান সিদ্দিকীর ওপর প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও তার কাজের ধরন নিয়ে বিভাগের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। তবে এইবার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুতর, কারণ এতে শুধুমাত্র পুলিশের নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন ওঠেনি, বরং একটি সংগঠিত ধর্মান্তরকরণ গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগও উঠেছে। এই ধরনের মামলায় পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা আইন-শৃঙ্খলা এবং জনগণের আস্থা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
ছাঙ্গুর গ্যাংয়ের নেটওয়ার্ক
এটিএস-এর পক্ষ থেকে করা তদন্তে এটিও জানা গেছে যে ছাঙ্গুর গ্যাং একটি সংগঠিত উপায়ে কাজ করত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দুর্বল শ্রেণির যুবকদের টার্গেট করে তাদের ধর্মান্তরকরণ করানো। এর পেছনে বড় फंडिंग নেটওয়ার্ক থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। ছাঙ্গুর ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ার পর পুরো চক্রের ওপর কড়া নজর রাখা হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেরঠ মামলার তদন্তে সিদ্দিকীর ভূমিকা
২০১৯ সালে মেরঠের সিভিল লাইন থানা এলাকায় একটি মেয়ের অপহরণ ও ধর্মান্তরকরণের মামলায় ছাঙ্গুর গ্যাংয়ের সদস্য বদর আখতার সিদ্দিকীর নাম উঠে আসে। ভুক্তভোগী পরিবার যখন এফআইআর দায়ের করতে যায়, তখন থানার ইনচার্জ ছিলেন আব্দুল রহমান সিদ্দিকী। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি শুধুমাত্র মামলা দায়ের করতেই অস্বীকার করেননি, বরং পরিবারকে হুমকি দিয়ে থানা থেকে তাড়িয়ে দেন। এই মামলাটি এখন আবার এটিএস-এর তদন্তে সামনে এসেছে এবং সিদ্দিকীর গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।