দিল্লিতে পরিচারিকার লক্ষাধিক টাকার চুরি, গ্রেপ্তার নারী ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী

দিল্লিতে পরিচারিকার লক্ষাধিক টাকার চুরি, গ্রেপ্তার নারী ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী

দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জংপুরা এলাকা থেকে একটি চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা সামনে এসেছে। এখানে সম্প্রতি কাজে নেওয়া এক অস্থায়ী পরিচারিকা বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকার গয়না ও নগদ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। অভিযুক্ত মহিলা মীনাক্ষী, যিনি গাজিয়াবাদের লোনির বাসিন্দা, চুরির পর পালিয়ে যান। তবে পুলিশের তৎপরতা এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তিনি বেশিদিন আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে, যার ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়। দিল্লি পুলিশের দল ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে মীনাক্ষীর গতিবিধির ওপর সন্দেহ প্রকাশ করে। এরপর পুলিশ গাজিয়াবাদের লোনি এলাকায় মীনাক্ষীর ডেরায় অভিযান চালায়, যেখানে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি চুরির কথা স্বীকার করেন।

চুরি করা গয়না বিক্রি করা জুয়েলারি ব্যবসায়ীও গ্রেপ্তার

মীনাক্ষী পুলিশকে জানায় যে, তিনি জংপুরার একটি বাড়ি থেকে সোনার গয়না চুরি করে ভোগল বাজারের এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ওই জুয়েলারির দোকানে অভিযান চালায় এবং প্রমোদ গুপ্তা নামক এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। তার দোকান থেকে সোনার পাঁচটি চুড়ি, একটি সোনার চেন, দুটি পেনডেন্ট এবং একজোড়া সোনার কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে।

এই পুরো ঘটনার বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ডিসিপি ঐশ্বর্য শর্মা নিশ্চিত করে জানান যে, অভিযুক্ত মীনাক্ষীর বয়স ৩৭ বছর এবং তিনি লোনির বাসিন্দা, যেখানে জুয়েলারি ব্যবসায়ী প্রমোদ গুপ্তার (৬৫) ভোগল এলাকায় একটি দোকান রয়েছে। উভয় অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং চুরির সঙ্গে জড়িত অন্যান্যের সন্ধান চলছে।

মাত্র কয়েক দিনের জন্য কাজে নেওয়া হয়েছিল

জানা গেছে, অভিযোগকারীর বাড়ির স্থায়ী পরিচারিকা কিছুদিনের জন্য ছুটিতে ছিলেন, তাই তারা কয়েক দিন আগে মীনাক্ষীকে অস্থায়ীভাবে কাজে নিয়েছিলেন। ২১ জুন, যখন মীনাক্ষী কোনো খবর না দিয়ে কাজে আসেননি, তখনই পরিবার জানতে পারে যে বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না ও নগদ টাকা চুরি গেছে।

পরিবার তৎক্ষণাৎ জংপুরা এক্সটেনশন থানায় অভিযোগ দায়ের করে, এরপর ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে এসএইচও পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন এসিপি মিহির সাকারিয়া। দলে ছিলেন এসআই অরুণ, এসআই পারাস, হেড কনস্টেবল কুলবিন্দর ও রবীন্দ্র, কনস্টেবল করণ এবং মহিলা কনস্টেবল বন্দনা।

বাড়ি থেকে নগদ ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মীনাক্ষী প্রকাশ করে যে, তিনি এই চুরির ঘটনা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি জানতেন যে তিনি কেবল কয়েক দিনের জন্য কাজে আছেন, তাই তিনি এই সুযোগের সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। তিনি মালিকের লকার থেকে গয়না চুরির পরিকল্পনা করেন এবং সেই অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটান।

মীনাক্ষীর কাছ থেকে পুলিশ ২.৫২ লক্ষ টাকা নগদ সহ ১৩টি বিদেশি মুদ্রা নোটও জব্দ করেছে। কর্মকর্তাদের সন্দেহ যে, অভিযুক্ত জুয়েলারির মাধ্যমে অন্যান্য চুরি যাওয়া গয়নাও বিক্রি করা হতে পারে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। বর্তমানে উভয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং এটাও দেখা হচ্ছে যে, এই চুরির পেছনে কোনো সুসংগঠিত চক্র কাজ করছে কিনা।

অস্থায়ী কর্মীদের বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা জরুরি

এই ঘটনাটি কেবল একটি সাধারণ চুরির ঘটনা নয়, বরং এটি দেখায় যে কীভাবে বাড়িতে অস্থায়ীভাবে রাখা কর্মীদের দ্বারা ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো কর্মীকে কাজে নেওয়ার আগে তার সম্পূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা অপরিহার্য।

দিল্লি পুলিশও এই ঘটনাটিকে সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছে যে, নতুন গৃহকর্মী নিয়োগ করার আগে স্থানীয় থানায় তাদের তথ্য অবশ্যই জমা দিন। এর ফলে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে এড়ানো যেতে পারে।

Leave a comment