Astra MkII: ভারতের নতুন এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুদ্ধের মোড় ঘোরাবে

Astra MkII: ভারতের নতুন এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুদ্ধের মোড় ঘোরাবে

Astra MkII ভারতের নতুন স্বদেশী এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যা ১৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে শত্রুপক্ষের বিমানকে নিশানা করতে পারে। এটি উন্নত রাডার, ECCM এবং ডুয়াল-পালস প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে কৌশলগত সুবিধা এবং আত্মনির্ভরতা প্রদান করবে।

Astra MkII: ভারতের স্বদেশী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত Astra MkII এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বর্তমানে তার চূড়ান্ত পরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্যতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অস্ত্র ব্যবস্থা হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। এর রেঞ্জ, নির্ভুলতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি বিবেচনা করে এটিকে চীন ও পাকিস্তানের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Astra MkII কি এবং এটি কেন বিশেষ?

Astra MkII, ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) দ্বারা নির্মিত একটি বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যা শত্রু যুদ্ধবিমানকে ১৬০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্ব থেকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি অস্ত্র সিরিজের দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র, যা MkI-এর তুলনায় দ্রুত, আরও নির্ভুল এবং প্রযুক্তিতে অনেক বেশি উন্নত।

Astra MkII-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সহজেই স্থাপন করা যেতে পারে — যেমন তেজস MkIA, MkII, Su-30MKI, রাফায়েল এবং আসন্ন স্টিলথ জেট AMCA।

কিভাবে কাজ করে: উন্নত প্রযুক্তির ক্ষমতা

১. ডুয়াল-পালস রকেট মোটর

Astra MkII-এ ডুয়াল-পালস সলিড রকেট মোটর ব্যবহার করা হয়েছে, যা দুটি পর্যায়ে কাজ করে। প্রথম পর্যায় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে দ্রুত উৎক্ষেপণ করে, যেখানে দ্বিতীয় পর্যায় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে লক্ষ্যের দিকে আরও বেশি গতি এবং নির্ভুলতার সাথে নিয়ে যায়। এই প্রযুক্তি এটিকে AIM-120D-এর মতো আমেরিকার অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সমতুল করে তোলে।

২. অ্যাকটিভ রাডার হোমিং সিকার

ক্ষেপণাস্ত্রটিতে লাগানো Active Radar Homing Seeker এটিকে শত্রুর বিমানগুলিকে রিয়েল-টাইমে সনাক্তকরণ এবং অনুসরণ করার ক্ষমতা দেয়। এই সিকার শত্রুর Electronic Countermeasure (ECM)-এর মতো জামিং সংকেতগুলিকেও সহজেই বাইপাস করতে পারে।

৩. ECCM এবং ইনফ্রারেড প্রতিরোধ

Astra MkII-এ Electronic Counter-Countermeasure (ECCM) প্রযুক্তি রয়েছে, যা এটিকে ইলেকট্রনিক জ্যামিং এবং ইনফ্রারেড হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করে। এর মানে হল যে এই ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর কৌশলপূর্ণ কৌশলগুলিকে পরাস্ত করতে পারে।

৪. স্মার্ট ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম

এই ক্ষেপণাস্ত্রের ডিজিটাল ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের সাহায্যে এটি তার লক্ষ্যের অবস্থান, গতি, উচ্চতা এবং দিকনির্দেশের উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে উপযুক্ত ফ্লাইট পথ নিজেই নির্ধারণ করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি মিলিসেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

কোন কোন ফাইটার জেট Astra MkII দিয়ে সজ্জিত হবে?

  1. তেজস MkIA এবং MkII: ভারতের নিজস্ব যুদ্ধবিমান তেজস এখন অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হচ্ছে। MkIA ইতিমধ্যে বিমান বাহিনীতে মোতায়েন করা হয়েছে এবং MkII তৈরি করা হচ্ছে। উভয় সংস্করণে Astra MkII যুক্ত করার ফলে এই বিমানগুলির আক্রমণের ক্ষমতা অনেক বাড়বে।
  2. Su-30MKI: ভারতীয় বিমান বাহিনীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী ফাইটার Su-30MKI-ও Astra MkII দ্বারা সজ্জিত হবে। এই বিমানটি ইতিমধ্যেই আকাশে থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত, তবে Astra MkII এটিকে ভবিষ্যতের বিমান যুদ্ধের জন্য আরও বিপজ্জনক করে তুলবে।
  3. রাফায়েল: রাফায়েলে বর্তমানে Meteor ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তবে Astra MkII-এর ইন্টিগ্রেশন এর লজিস্টিক স্বাধীনতা বাড়াবে এবং ভারত তার নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভর করতে পারবে।
  4. AMCA: Astra MkII ভারতের ভবিষ্যতের স্টিলথ জেট AMCA-এর সাথেও সমন্বিত করা হবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র AMCA-এর অভ্যন্তরীণ অস্ত্র ভাণ্ডারে স্থাপন করা যেতে পারে, যা এর স্টিলথ ক্ষমতা বজায় রাখবে।

কৌশলগত সুবিধা এবং आत्मनिर्भरতা

Astra MkII ভারতের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং 'আত্মনির্ভর ভারত' প্রকল্পের একটি বড় সাফল্য। এর অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশের কৌশলগত ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশী ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভরতা কমবে। এর মানে হল যে ভারত এখন নিজের উপর নির্ভর করে আধুনিক অস্ত্র তৈরি ও মোতায়েন করতে পারে।

পরীক্ষা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

এখন পর্যন্ত Astra MkII বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে—যেমন ক্যাপটিভ ফ্লাইট, সেপারেশন ট্রায়াল, গাইন্ডেন্স টেস্ট এবং মোটর ফায়ারিং। পরবর্তী ধাপ হল লাইভ ফায়ারিং টেস্ট, যা ড্রোন টার্গেটের উপর করা হবে।

যদি এই পরীক্ষাও সফল হয়, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যে Astra MkII আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

Leave a comment