দিল্লির আদালত ২০১৬ সালের ৬০ বছর বয়সী এক মহিলার সাথে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় ১৬ বছর বয়সী অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আদালত অপরাধের নৃশংসতায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে যে শাস্তির আদেশ পরে ঘোষণা করা হবে।
নয়াদিল্লি: দিল্লির একটি আদালত সাত বছর পুরোনো এক নৃশংস অপরাধে চমকপ্রদ রায় ঘোষণা করে এক নাবালককে ৬০ বছর বয়সী এক মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ঘটনাটি ২০১৭ সালের, যখন অভিযুক্ত শুধু মহিলাটির উপর লোহার রড দিয়ে হামলা করেনি, বরং তার সাথে অমানবিক অত্যাচারও করেছিল। আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেছে যে এই অপরাধ "নৃশংসতার চরম সীমা" নির্দেশ করে। এখন শাস্তির উপর পরবর্তী শুনানি আগামী তারিখে হবে।
লোহার রড দিয়ে হামলা করে নৃশংসতা
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর দুপুরে দিল্লিতে এই জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। অভিযুক্ত সে সময় ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে একজন নাবালক ছিল। সে একজন ৬০ বছর বয়সী মহিলার উপর আকস্মিকভাবে হামলা করে এবং লোহার রড দিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে।
প্রসিকিউশন পক্ষের মতে, অভিযুক্ত মহিলাটিকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিল এবং তারপর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন নিরাপত্তা প্রহরী হস্তক্ষেপ করেন, যার পর অভিযুক্তকে সেখানেই ধরে ফেলা হয়। আহত মহিলাটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার মৃত্যু হয়।
অমানবিক কাজের উপর আদালতের তীব্র অসন্তোষ
অতিরিক্ত দায়রা জজ অমিত সেহরাওয়াত তার আদেশে বলেন যে অভিযুক্ত মৃত মহিলার শরীরের প্রায় প্রতিটি অংশে আঘাত করেছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে মহিলার গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাকে আদালত ‘ধর্ষণের সমতুল্য অপরাধ’ বলে মনে করেছে।
বিচারক মন্তব্য করেন যে “অভিযুক্তের কর্মকাণ্ড তার অমানবিক মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে, এবং এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয় বরং বিকৃত চিন্তার ফল।” আদালত আরও বলেছে যে এই ঘটনা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং আক্রান্ত মহিলাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
গুরুতর অপরাধে জেজেবি-র বড় সিদ্ধান্ত
প্রথমে এই মামলা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে (জেজেবি) চলেছিল, কিন্তু ২০১৮ সালে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত দেয় যে অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনা করে অভিযুক্তের উপর প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার চালানো হোক। এরপর মামলাটি বিশেষ পকসো আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রসিকিউশন দৃঢ় প্রমাণ এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেশ করে এটি প্রমাণ করে যে অভিযুক্ত ধর্ষণ ও হত্যা উভয় অপরাধ করেছে। আদালত এই প্রমাণগুলিকে যথেষ্ট মনে করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আদালতে শাস্তির উপর শীঘ্রই পরবর্তী শুনানি
২৮ অক্টোবরের রায়ে আদালত দোষ নির্ধারণ করেছে, তবে শাস্তির সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে। প্রসিকিউশন পক্ষ এখন কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছে যাতে এমন অপরাধ বন্ধ করা যায়।
এই মামলা দিল্লিতে মহিলাদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অপরাধের গুরুত্বকে আরও একবার সামনে নিয়ে আসে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত শুধু ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য ন্যায়বিচারের দিকে একটি পদক্ষেপ নয়, বরং সমাজকে এই বার্তাও দেয় যে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, সে নাবালকই হোক না কেন।













