ভারত ও চীনের মধ্যে রেয়ার-আর্থ বাণিজ্য নিয়ে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হিটাচি সহ তিনটি ভারতীয় কোম্পানি—কন্টিনেন্টার ইন্ডিয়া, হিটাচি এবং জয় উশিন—চীন থেকে রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেট আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এই লাইসেন্স এই শর্তে দেওয়া হয়েছে যে, এই সম্পদগুলি আমেরিকায় রপ্তানি বা প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে না।
রেয়ার-আর্থ বাণিজ্য: ভারত-চীনের মধ্যে রেয়ার-আর্থ বাণিজ্যকে নতুন দিশা দিয়ে কেন্দ্র সরকার তিনটি ভারতীয় কোম্পানিকে চীন থেকে রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেট আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কন্টিনেন্টার ইন্ডিয়া, হিটাচি এবং জয় উশিনকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আমদানিকৃত সম্পদগুলি আমেরিকায় রপ্তানি বা প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে না। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন চীন ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেটের রপ্তানিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করেছে।
শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন
সূত্র অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলিকে এই শর্তে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যে, চীন থেকে আমদানিকৃত রেয়ার-আর্থ সম্পদগুলি আমেরিকায় রপ্তানি করা হবে না। এছাড়াও, এগুলি কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞাগুলির সরাসরি সম্পর্ক চীন ও আমেরিকার মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সঙ্গে। চীন সম্প্রতি তার রেয়ার-আর্থ রপ্তানি নিয়মে পরিবর্তন এনেছে, যার পর এই ক্ষেত্রটি আবারও বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
চীনের আধিপত্য অব্যাহত
রেয়ার-আর্থ ম্যাটেরিয়ালস অর্থাৎ বিরল খনিজ পদার্থ আধুনিক প্রযুক্তির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। ইলেকট্রিক ভেহিকল, স্মার্টফোন, বায়ু টারবাইন, সোলার প্যানেল এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলিতে এগুলির ব্যবহার হয়। এই ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় এবং বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ রেয়ার-আর্থ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের উপর তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে চীন রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেটের রপ্তানির উপর কঠোর নিয়ম কার্যকর করেছে, যার ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর প্রভাব পড়েছে। চীনের দাবি, এই খনিজগুলি শুধুমাত্র অসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত। তবে, অনেক দেশ এটিকে অর্থনৈতিক চাপের কৌশল হিসেবে দেখছে।
ভারতের উপর প্রভাব এবং ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা

সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (SIAM)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৫২টি কোম্পানি চীন থেকে রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেট আমদানি করে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত ৮৭০ টন রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেট আমদানিতে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা খরচ করেছে। ইলেকট্রিক যান এবং হাইব্রিড প্রযুক্তিতে দ্রুত ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে এই খনিজগুলির উপর ভারতের নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে।
সরকার মনে করে যে, এই কোম্পানিগুলিকে সীমিত আমদানির অনুমোদন দিলে অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলি স্বস্তি পাবে। তবে, ভারতের লক্ষ্য হল আগামী বছরগুলিতে রেয়ার-আর্থ খনিজগুলির উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়া।
ভারতের কাছে রয়েছে বিশাল ভান্ডার
ভারতের কাছে বিশ্বের প্রায় ৬ শতাংশ রেয়ার-আর্থ খনিজ পদার্থের ভান্ডার রয়েছে। কেরল, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিতে এগুলির বিশাল ভান্ডার পাওয়া যায়। ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা (GSI)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই রাজ্যগুলিতে উপস্থিত রেয়ার-আর্থ উপাদানগুলির গুণগত মান উচ্চ স্তরের।
তবে, বর্তমানে ভারতের উৎপাদন বিশ্বব্যাপী ১ শতাংশেরও কম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যদি এই সম্পদগুলির খনন ও শোধনের উপর দ্রুত কাজ করা হয়, তবে ভারত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে উঠতে পারে।
চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে পদক্ষেপ
ভারত সরকার এখন রেয়ার-আর্থ খনন ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত এবং বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার উপর জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির সাথে মিলে বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার দিকেও কাজ চলছে।
 
                                                                        
                                                                             
                                                












