ডেঙ্গুর ঘটনা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু রোগীর লিভারের ওপরও প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ক্রমাগত বমি, পেটে ব্যথা, জন্ডিস এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। জল পান করা, হালকা খাবার গ্রহণ করা এবং গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে পৌঁছানো জরুরি, যাতে পরিস্থিতি গুরুতর না হয়।
ডেঙ্গু: দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ডেঙ্গুর ঘটনা বাড়ছে এবং কিছু রোগীর মধ্যে এর গুরুতর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দিল্লির জিটিবি হাসপাতালের অধ্যাপক ড. কুলদীপ কুমারের মতে, এবার ডেঙ্গু লিভারের ওপরও প্রভাব ফেলছে, যার ফলে এনজাইমের মাত্রা (SGOT, SGPT) বাড়ে এবং লিভারে ফোলা দেখা দিতে পারে। রোগীদের মধ্যে ক্রমাগত বমি, পেটে ব্যথা, জন্ডিস, ক্ষুধা হ্রাস এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। ড. কুমার জল পান করা, হালকা খাবার খাওয়া এবং ভাজা-পোড়া, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডেঙ্গু এবং লিভারের ওপর প্রভাব
ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর লিভারের কোষগুলির ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে SGOT এবং SGPT-এর মতো এনজাইমের মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল অথবা যাদের আগে থেকেই লিভার সম্পর্কিত কোনো রোগ ছিল, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যাচ্ছে। ড. কুলদীপ জানান যে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে লিভারের ফোলাভাব গুরুতর রূপ নিতে পারে, যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ডেঙ্গুর সময় লিভার প্রভাবিত হওয়ার কারণ হল ভাইরাস সরাসরি লিভারের কোষগুলির ক্ষতি করে। এর কারণে শরীরে জন্ডিসের মতো লক্ষণও দেখা দিতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে লক্ষণগুলি সময়মতো চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হতে পারে।
কোন লক্ষণগুলির উপর নজর রাখবেন
ডেঙ্গুর কারণে লিভার প্রভাবিত হলে রোগীদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। অধ্যাপক ড. কুলদীপের মতে, এই লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
- ক্রমাগত বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করা।
- পেটের ডান দিকে ব্যথা বা ভারী ভাব।
- চোখ ও ত্বকের হলুদ হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ জন্ডিসের মতো অবস্থা।
- ক্ষুধা না লাগা এবং ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভব করা।
এই লক্ষণগুলি দেখা মাত্রই অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত। সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি গুরুতর হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
ডেঙ্গুতে প্রতিরোধ এবং খাদ্যাভ্যাস
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে রোগীদের শরীরে জলের অভাব না হতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জল এবং ডাবের জল পান করা উপকারী।
ড. কুলদীপের মতে, ডেঙ্গুর সময় ভাজা-পোড়া এবং মশলাদার খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। হজমে অসুবিধা সৃষ্টিকারী খাবার এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া উচিত নয়। রেড মিট খাওয়াও এই সময়ে ক্ষতিকারক হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত হাইড্রেশনের মাধ্যমে রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়।
হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা
যদি রোগীর মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়, যেমন ক্রমাগত বমি, পেটে তীব্র ব্যথা, চোখ বা ত্বকের হলুদ হয়ে যাওয়া, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডেঙ্গুর গুরুতর প্রভাব কমানো যেতে পারে।
ড. কুলদীপ জানান যে, জিটিবি হাসপাতালের ওপিডি এবং ইমার্জেন্সিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গুরুতর লক্ষণযুক্ত রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি করা হচ্ছে। লিভার প্রভাবিত রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং উপযুক্ত ওষুধ-চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা
পরিবর্তিত আবহাওয়া এবং ডেঙ্গুর ক্রমবর্ধমান ঘটনায় শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা যারা আগে থেকেই লিভারের রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর লিভারে প্রভাব গুরুতর হতে পারে।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য পর্যাপ্ত জল পান করানো, হালকা এবং হজমযোগ্য খাবার দেওয়া এবং তাপমাত্রা ও জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। পাশাপাশি, লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জীবন রক্ষাকারী প্রমাণিত হতে পারে।