ডায়াবেটিস চোখের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে: লক্ষণ, ঝুঁকি এবং বাঁচার উপায়

ডায়াবেটিস চোখের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে: লক্ষণ, ঝুঁকি এবং বাঁচার উপায়

ডায়াবেটিস শুধুমাত্র সুগার লেভেল বৃদ্ধি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি চোখের স্বাস্থ্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা রেটিনার স্নায়ুগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে ঝাপসা দৃষ্টি, চোখে আলোর ঝলক, কালো দাগ এবং ধীরে ধীরে অন্ধত্বের ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। সময় মতো পরীক্ষা এবং লাইফস্টাইল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর থেকে বাঁচা সম্ভব।

Diabetes Effects on Eyes: ভারতে ডায়াবেটিসের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে এবং এটি কেবল শরীরের সুগার লেভেল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ সমস্যা নয়। এই রোগ চোখের স্বাস্থ্যের উপরও বড় প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তে শর্করা থাকার কারণে চোখের স্নায়ুতে ফোলাভাব এবং ব্লকেজ হতে পারে, যার ফলে ছানি (Cataract), গ্লকোমা (Glaucoma) এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি जैसी রোগ হতে পারে। शुरुआती লক্ষণগুলিকে অবহেলা করলে এটি মারাত্মক দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা অন্ধত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ডায়াবেটিস কীভাবে চোখকে প্রভাবিত করে

ডায়াবেটিস শরীরে রক্ত প্রবাহ এবং স্নায়ুগুলিকে প্রভাবিত করে। চোখের ভিতরে থাকা অত্যন্ত পাতলা এবং নাজুক স্নায়ুগুলির উপর এর সরাসরি প্রভাব পড়ে। যখন রক্তের শর্করা দীর্ঘ সময় ধরে বেশি থাকে, তখন এই স্নায়ুগুলিতে ফোলাভাব আসতে পারে। অনেক সময় এর থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ নির্গত হতে শুরু করে। এর প্রভাব সরাসরি রেটিনার উপর পড়ে, যা চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর। ধীরে ধীরে রেটিনার উপর চাপ বাড়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং দেখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

কোন কোন রোগ হতে পারে

ডায়াবেটিসের কারণে চোখে অনেক গুরুতর রোগ তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। এতে চোখের রেটিনার স্নায়ু দুর্বল হয়ে লিক করতে শুরু করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত লোকেদের মধ্যে ছানির ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গ্লকোমা অর্থাৎ কালো ছানিও ডায়াবেটিসের কারণে হতে পারে। এতে চোখের ভিতরের চাপ বেড়ে যায়, যার ফলে অপটিক নার্ভ প্রভাবিত হয় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে।

শুরুর লক্ষণ কেমন দেখায়

ডায়াবেটিস থেকে হওয়া চোখের সমস্যাগুলো শুরুতে ধীরে ধীরে সামনে আসে। প্রায়শই রোগীরা প্রথমে ঝাপসা দেখার অভিযোগ করেন। আলোতে তীব্র ঝলকানি বা হ্যালো দেখা, কাছের বা দূরের জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখতে না পাওয়া সাধারণ লক্ষণ। যেমন যেমন সমস্যা বাড়তে থাকে, রঙের পার্থক্য করতে অসুবিধা হতে শুরু করে। অনেক লোকের হঠাৎ করে চোখের সামনে ভাসতে থাকা কালো দাগ দেখতে পান। এটি একটি ইঙ্গিত যে রেটিনা প্রভাবিত হচ্ছে। এছাড়াও চোখে জ্বালা, লাল ভাব, শুষ্কতা এবং বার বার চোখের পলক ফেলার মতো সমস্যাও হতে পারে।

গুরুতর পরিস্থিতিতে কী হতে পারে

যদি দীর্ঘ সময় ধরে এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করা হয়, তাহলে এটি গুরুতর পরিস্থিতির রূপ নিতে পারে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বাড়লে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি চলে যেতে পারে। গ্লকোমা এবং ছানিরও সময় মতো চিকিৎসা না করালে স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল, ডায়াবেটিস চোখের জন্য ততটাই বিপজ্জনক, যতটা কিডনি এবং হার্টের জন্য হয়। এই কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের নিয়মিত পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হয়।

বাঁচার উপায় কেন জরুরি

ডাক্তাররা বলেন যে ডায়াবেটিস থেকে হওয়া চোখের রোগগুলো প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই বাড়তে থাকে। যতক্ষণ না রোগীর বিষয়টি জানতে পারে, ততক্ষণ রোগ অনেকটা বেড়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত লোকেদের বছরে অন্তত একবার চোখের সম্পূর্ণ পরীক্ষা করানো উচিত। এর সাথে সাথে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা চোখের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করা হয়।

Leave a comment