নয়ডায় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে বৃদ্ধের থেকে ৬০ লক্ষ টাকার প্রতারণা

নয়ডায় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে বৃদ্ধের থেকে ৬০ লক্ষ টাকার প্রতারণা

নয়ডায় ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের থেকে স্ক্যামাররা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে ৬০ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছে। ল্যান্ডলাইন কল, ভিডিও কল এবং ভুয়া পুলিশ পরিচয় ব্যবহার করে, দুই সপ্তাহ ধরে তাকে মানসিক ভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

সাইবার ক্রাইম: নয়ডায় একটি হৃদয়বিদারক সাইবার জালিয়াতি সামনে এসেছে, যা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর মতো নতুন সাইবার অপরাধের পদ্ধতিগুলি উন্মোচন করেছে। ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে স্ক্যামাররা একটি রেকর্ড করা ল্যান্ডলাইন কলের মাধ্যমে দুই সপ্তাহ ধরে মানসিক ভাবে বন্দী করে রাখে এবং প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার প্রতারণা করে।

এই ঘটনাটি কেবল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তোলে না, বরং এটিও দেখায় যে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে নিরীহ মানুষ শিকার হতে পারে।

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ আসলে কী?

ডিজিটাল অ্যারেস্ট একটি নতুন সাইবার ক্রাইম শব্দ, যেখানে ভুক্তভোগীকে মানসিক ও ডিজিটালভাবে বন্দী করে, ভয় ও বিভ্রান্তির পরিবেশ তৈরি করে তাদের থেকে কাঙ্ক্ষিত কাজ করানো হয়।

যেমন এই ঘটনাটিতে হয়েছে— ভুক্তভোগীকে ভুয়া সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা ভিডিও কলে ভয় দেখানো হয়েছিল, এবং বলা হয়েছিল যে তার আধার কার্ডের ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

কীভাবে প্রতারণার শুরু?

ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৮ জুন, ২০২৫ তারিখে, যখন ভুক্তভোগী একটি ল্যান্ডলাইনে স্বয়ংক্রিয় ভয়েস কল পান। কলে বলা হয়েছিল যে তার ফোন পরিষেবা দুই ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি তিনি এই বিষয়ে তথ্য জানতে চান, তবে ডায়ালপ্যাডে ৩ টিপুন।

বৃদ্ধ যেই ৩ টিপেছেন, তিনি স্ক্যামারদের জালে জড়িয়ে পড়েন। কলে আসা ব্যক্তি নিজেকে এয়ারটেল এক্সিকিউটিভ ‘রবি কুমার’ হিসাবে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন যে তার নম্বর মুম্বাই পুলিশের নির্দেশে বন্ধ করা হচ্ছে, কারণ তার তথ্য অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপ, ভিডিও কল এবং সিবিআই-এর ফাঁদ

এরপরে, ভুক্তভোগীকে একটি ‘গোপনীয় চুক্তি’ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়, যাতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। এরপরে তাকে একটি ভিডিও কলে যুক্ত করা হয়, যেখানে উপস্থিত ব্যক্তি নিজেকে সিবিআই-এর ডিসিপি প্রবীণ সুদ এবং ইন্সপেক্টর সঞ্জয় সিং হিসাবে পরিচয় দেন।

ভিডিও কলের সময়, নকল পুলিশ ইউনিফর্ম এবং সরকারি ঢঙে কথা বলে বৃদ্ধকে বিশ্বাস করানো হয় যে তিনি গুরুতর অপরাধমূলক মামলায় জড়িত এবং কেবল ‘সহযোগিতা’ করার মাধ্যমেই তিনি এই মামলা থেকে বাঁচতে পারেন।

দুই সপ্তাহ ধরে চলে সাইবার আতঙ্ক

১৮ জুন থেকে ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত, স্ক্যামাররা ক্রমাগত বৃদ্ধকে ভিডিও কল এবং মেসেজের মাধ্যমে ভয় দেখায়, হুমকি দেয় এবং তাকে ব্যাঙ্ক ট্রানজাকশন করতে বাধ্য করে।

বৃদ্ধ একাধিক আরটিজিএস (RTGS) ট্রানজাকশনের মাধ্যমে নিজের এবং তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে স্ক্যামারদের কাছে ৬০ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তর করেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, স্ক্যামাররা তাকে এই বিষয়ে কারও সাথে কথা বলতে নিষেধ করে।

প্রতারণার নতুন ধারা: ‘ল্যান্ডলাইন কল + ভিডিও ভয়’

এই ঘটনা সাইবার অপরাধীদের নতুন কৌশলগুলি প্রকাশ করে:

  • ল্যান্ডলাইন কলের ব্যবহার, যাতে কলটিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়
  • রেকর্ড করা কণ্ঠস্বরের আশ্রয়
  • সরকারি কর্মকর্তা সেজে ভিডিও কল
  • ভুয়া নথি এবং হুমকি বার্তা
  • ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর হুমকি, অর্থাৎ, আপনি এখন বাইরে যেতে পারবেন না, কাউকে জানাতে পারবেন না

ভুক্তভোগী কীভাবে মুখ খুললেন?

টানা ভয়ে এবং মানসিক চাপে অতিষ্ঠ হয়ে, যখন বৃদ্ধ বুঝতে পারেন যে তিনি একটি ফাঁদে পড়েছেন এবং তার টাকাও শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি স্ক্যামারদের নম্বর ব্লক করেন এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ এখন সাইবার সেলের মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করছে এবং কল ও ট্রানজাকশনগুলির সম্পূর্ণ রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কীভাবে বাঁচবেন?

এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে কিছু জরুরি সতর্কতা:

  • কখনও কল বা মেসেজের মাধ্যমে ভয় পাওয়ার দরকার নেই— ভারতে কোনো আধিকারিক ভিডিও কল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করেন না।
  • অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কলে ‘সন্দেহ’ করুন— বিশেষ করে যখন কেউ আপনার কাছে টাকা চায় বা নথি শেয়ার করতে বলে।
  • পরিবারের সাথে কথা গোপন করবেন না— ঠগদের সবচেয়ে বড় কৌশল হল তারা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়।
  • পুলিশ বা সাইবার সেলকে দ্রুত জানান— সময়মতো রিপোর্ট করলে ক্ষতি রোধ করা যেতে পারে।
  • আরটিজিএস বা কোনো প্রকার ট্রানজাকশনের আগে পুনরায় চিন্তা করুন— এবং কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির পরামর্শ নিন।

Leave a comment